২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
প্রকল্পে বিলম্ব ও বাড়তি ব্যয়

জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

-

সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে ও নির্ধারিত ব্যয়ে সম্পন্ন না হওয়া বর্তমানে সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। ছোট বা বড় যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে মাত্রাতিরিক্ত বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে এবং এ জন্য কাউকে কোনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। এ ধারাবাহিকতা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। বলা যায়, জবাবদিহি না থাকার এ অনুশীলনই এখন সরকারি কর্মকাণ্ডের নতুন সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, দীর্ঘ আট বছর ধরে শত কোটি টাকা ব্যয় করার পর এখন প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে। এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ বাতিলের মধ্য দিয়ে। অথচ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ সব গ্রহণ প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এখন আট বছর পর প্রকল্পে ভুল ছিল এমনটাই বলা হচ্ছে। কিন্তু জনগণের শত কোটি টাকা ব্যয় করার পর প্রকল্পে ভুল ছিল বলার কোনো সুযোগ নেই। তবু তা বলা হচ্ছে কোনোরকম লজ্জা, সঙ্কোচ বা অনুতাপ প্রকাশ না করেই। সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, এ বিপুল অর্থ ব্যয়ের দায় কে নেবে? সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তা জবাব দেয়ার দরকারই মনে করেননি। এর অর্থ হলোÑ জনগণকে তারা ধর্তব্যের মধ্যেও আনেন না। জবাব দেয়ার কোনো দায় কারো নেই। অথচ প্রকল্পে ব্যয়িত প্রতিটি টাকা জনগণের কষ্টে উপার্জিত। বিদেশী ঋণে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় সেই অর্থের দায়ও জনগণকেই বহন করতে হয়। যারা দায়িত্বে আছেন তারা এসব বিষয় বিবেচনায় রাখার দরকার মনে করেন না বলেই মনে হয়। সরকারি কর্মকাণ্ডের ব্যর্থতার এটি এক বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে।
শুধু তো এই একটি প্রকল্পের ঘটনা নয়, এমন অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প আছে যেগুলো নির্ধারিত সময়ে ও ব্যয়ে সম্পন্ন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা দফতর। মূলত কোনো প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে ও ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত যদি থেকেও থাকে সেটি দুরবিন দিয়ে খুঁজে বের করতে হবে।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত তালিকার অনেক প্রকল্পের অগ্রগতিও শম্বুকগতিতে আক্রান্ত। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মহেশখালীর-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্প, পায়রা তৃতীয় সমুদ্রবন্দর, পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেল সংযোগ, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলের ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্প ধীর অগ্রগতি ও বাড়তি অর্থ বরাদ্দের অন্যতম উদাহরণ। কোনোটিরই অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এসব বিলম্বের জন্য কোভিড মহামারীর ওপর দায় চাপানো সহজতম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে একই উদাহরণ দিলে সেটি আর হালে পানি পায় না। বরং প্রতিটি প্রকল্পে দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, অদক্ষতা ও যথাযথ সমীক্ষা ইত্যাদির নমুনা পাওয়া যাবে। এসব কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে, বারবার ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে।
পুরো পরিস্থিতিই অস্বাভাবিক এবং জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কারণ প্রকল্প সম্পন্ন করতে দফায় দফায় সময় ও অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর ফলে শুধু যে জনগণ যথাযথ সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা-ই নয়, তাদের কষ্টার্জিত অর্থেরও ভয়াবহ অপচয় হচ্ছে। এভাবে কোনো জাতি এগোতে পারে না। জাতীয় অগ্রগতির জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রাথমিক শর্ত।


আরো সংবাদ



premium cement