রোহিঙ্গা প্রশ্নে কৌশল নবায়ন দরকার
- ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সম্পর্ক ঢিলেঢালা হতে শুরু করেছে। অন্য দিকে দেশটির জাতীয় ঐক্যের সরকারের (এনইউজি) কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে। দেশের ভেতরে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বর্ধিতহারে চ্যালেঞ্জের আভাস মিলছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জান্তা সরকারের কোণঠাসা হওয়ার লক্ষণও স্পষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী চীনকে অবলম্বন করে সামরিক সরকার কতদূর যাবে সেই সংশয় দেখা দিয়েছে। অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠার আগে যেভাবে সামরিক জান্তা দেশটি শাসন করেছে সে সুযোগ আগের মতো আর অবারিত থাকছে না। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির নতুন মোড় নিচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নেও ঢাকাকে তার প্রচেষ্টা নবায়ন করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘে জান্তা সরকারের নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের চেষ্টা সফলতা পায়নি। সু চির আমলে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুনকে প্রত্যাহার করে নেয়ার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। তুন জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে পারেননি মূলত চীন ও রাশিয়ার বাধার মুখে। প্রচেষ্টার এতটুকুই সফলতা জান্তা সরকারের পক্ষে এসেছে। তবে তিনি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার কমিটিতে ভাষণ দিয়েছেন। ওই ভাষণে তিনি দেশের জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাকে সমর্থনের জন্য জাতিসঙ্ঘ ও এর সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিশালী সদস্য ফ্রান্স মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্যের সরকারকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। এ জন্য দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এর পরপরই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেছে। দেশটির চলমান মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ৬৪৭ সদস্য ভোট দেন। মাত্র দু’জন সদস্য প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। পার্লামেন্ট বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে বিকল্প সরকারকে আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ানের ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারের সেনাশাসককে বাদ দেয়া হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে একজন আমলা সম্মেলনে অংশ নিতে পারবেন। সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সংস্থাটির এমন অবস্থান গ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ। ইতঃপূর্বে তারা রোহিঙ্গা বিষয়ে সামান্য বিবৃতি দিতেও উৎসাহী হয়নি। সু চি ও তার দলের কারাবন্দী নেতাদের সাথে দেখা করার অনুমতি চেয়েছিলেন আসিয়ানের মিয়ানমারবিষয়ক দূত ব্রুনেইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরিওয়ান ইউসুফ। জান্তা সরকার ইউসুফকে কোনো রাজবন্দীর সাথে দেখা করার সুযোগ দেবে না বলে জানানোর পর আসিয়ানের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের পর সামরিক শাসকের প্রধানকে বৈঠক থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আসিয়ানের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ নয়টি দেশ ও জোট এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে মিয়ানমারের সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারবিষয়ক আসিয়ানের দূতকে সমর্থন জানানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এটি বোঝা যাচ্ছে, জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বাড়ছে দেশের ভেতরে থেকেও প্রতিরোধ।
মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশ হলেও বাংলাদেশের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি। রোহিঙ্গাদের উৎখাত করে এ দেশে ঠেলে দিয়ে শত্রুতার মনোভাবই প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। তাই বাংলাদেশকেও সুযোগ বুঝে কৌশল গ্রহণ করা উচিত। বিকল্প সরকার রোহিঙ্গাবিষয়ক নীতি প্রকাশ করেছে। সেখানে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে নাগরিক মর্যাদায় ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সমর্থন হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতে এখন জান্তা সরকারের ব্যাপারে ঢাকার স্বতন্ত্র কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। চীনসহ শক্তিশালী দেশগুলোর কথা মাথায় নিয়ে রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমাদের নবায়ন করতে হবে কৌশল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা