নগরের দরিদ্রদের দিকে তাকান
- ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে নতুন করে হতদরিদ্রের কাতারে নেমে গেছে বিশ্বের ১০ কোটির বেশি মানুষ। এর ৮০ শতাংশই বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিক। তার মানে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য মধ্যম আয়ের দেশের মোট আট কোটি মানুষ হতদরিদ্র হয়ে পড়েছে। এই ধারণা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অবশ্য বলেছেন, করোনার কারণে গত বছর ১২ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে।
বাংলাদেশে কোভিডের প্রভাব গুরুতর। দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। বিভিন্ন জরিপ রিপোর্টে দেখা গেছে, দারিদ্র্যের হার ৩৫ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনার কারণে দেড় কোটির বেশি মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছেন। (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, করোনার কারণে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ অন্তত পাঁচ বছর পিছিয়ে গেছে।
করোনায় সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছেন নগর দরিদ্ররা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফলে বলা হয়, করোনায় গ্রামের তুলনায় শহরে নতুন দরিদ্রের হার ছিল বেশি। করোনাকালে নগরের অনেক মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে আসে। অনেকে অতি দরিদ্রে পরিণত হয়। করোনার আঘাতে সার্বিকভাবে দেশে নতুন করে যে আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে তার বৃহদংশই নগরবাসী। কিন্তু সরকারের কার্যক্রমে নগর দারিদ্র্যের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
এ বছর সরকার অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বরাদ্দও বেড়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দের হার মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত অর্থবছর ছিল ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে চলতি অর্থবছর সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বরাদ্দ এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এ অর্থ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। গত অর্থবছর এ হার ছিল ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নগর দরিদ্রদের প্রতি নজর না দেয়ায় সমস্যা রয়ে গেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সারা দেশে ১২০টির মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এখন চলমান; কিন্তু এগুলোর সবই গ্রামীণ দরিদ্রদের লক্ষ্য করে নেয়া। মাত্র ১০টি কর্মসূচি আছে নগর এলাকার দরিদ্রদের জন্য। এই কর্মসূচিগুলোও বাস্তবে খুব একটা কার্যকর নয়। কেননা এগুলো বাস্তবায়নের মতো ভালো কোনো কাঠামো নেই। এ কারণে করোনাকালে প্রকৃত সুবিধাভোগীর কাছে সহায়তা পৌঁছানো যায়নি। শহরাঞ্চলে করোনার চিকিৎসা নিয়ে কী ধরনের দুর্দশায় পড়তে হয়েছে, সেটি মানুষ হয়তো কখনো ভুলবে না। পত্রিকান্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের বড় দুই শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামে বলার মতো কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেই। অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা। শহরাঞ্চলে নিরাপত্তা কর্মসূচির যে কথা বলা হয়, সেটিও আসলে পৌরসভা পর্যন্ত। অর্থাৎ নগরকেন্দ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি তেমন নেই।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে দৃশ্যমান যে কর্মসূচিটি সামান্য হলেও কার্যকর ভূমিকা রাখছে সেটি হলো খোলাবাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রি। এর বাইরে আর কোনো কর্মসূচি নেই বললেই চলে। নগদের দরিদ্রদের বাসস্থান সঙ্কট, সুপেয় পানির অভাব, পয়ঃনিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের অভাব ইত্যাদি সমস্যা এখন তীব্রতর। হিমশিম খাচ্ছে নগর দরিদ্ররা। তারা সাধারণত এক জায়গায় থাকে না। বিভিন্ন বস্তিতে বিভিন্ন সময় বাস করে। কখনো গ্রামে চলে যায়, আবার ফিরে আসে। এসব কারণে তাদের সবাইকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা কিছুটা দুরূহও।
নগর এলাকার দারিদ্র্যবিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানোর পাশাপাশি এগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ পরিকাঠামো জরুরি। তা না হলে কোভিড-উত্তর অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের প্রয়াস সফলতার মুখ দেখবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা