২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আপনজনদের হত্যা

পারিবারিক কলহের পরিণতি

-

রক্তের সম্পর্কে বড় ধরনের ফাটল ধরাচ্ছে পারিবারিক কলহ। বাবা-মা, ভাইবোন ও সন্তানরা একে অপরকে অবলীলায় হত্যা করছে। সামান্য স্বার্থের কারণে ঘটছে নিষ্ঠুর সব ঘটনা। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে শিশু হত্যা। এরা এর সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে শুধু দুর্বল হওয়ার কারণে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত সুবিধা পাওয়ার দুরভিসন্ধি থেকে শিশুদের হত্যা করে আপনজনরা। আবার ঘটনার সাক্ষী গায়েব করতেও খুনিরা শিশুদের হত্যা করছে। এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে খুনের ঘটনা ঘটলেও পারিবারিক কলহের আগুন আমাদের গ্রাস করে নিয়েছে। অনেকে তুষের আগুনে জ্বলে চলেছেন কোনো ধরনের পরিত্রাণ পাচ্ছেন না।
গত বুধবার রাতে এমনই এক পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। বড় ভাই সাদেক হোসেন গলা কেটে হত্যা করেছেন নিজের মা-বাবা ও সহোদর এক ভাইকে। যদিও পুলিশের তদন্ত এখনো নিশ্চিত করা হয়নি; তবে লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে পরিবারের বড় ছেলে সাদেক তিন তিনটি খুন করেছেন। রাতে তিনি বাড়ির ছাদ থেকে ডাকাত পড়েছে বলে চিৎকার দেন। প্রতিবেশীরা বাড়ির চার পাশ খোঁজাখুঁজি করেও ডাকাত পড়ার কোনো আলামত পাননি। এর মধ্যে ঘরের দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে ঘরে ঢুকে প্রতিবেশীরা তার বাবা-মা ও ভাইয়ের গলাকাটা লাশ দেখতে পান। শেষে তিনি নিজেও উপস্থিত ক্ষেত্রেই হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, মূলত খুনি বড় ভাইয়ের সাথে পরিবারের বাকিদের বিরোধ চলছিল। এর কারণ, বাবা তার বাড়ির জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি মা, ছোট বোন ও খুন হওয়া ভাইকে লিখে দেন। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি চলছিল।
গত বছর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় অন্য আরেকটি ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই শিশু সন্তান খুন হয়। পুলিশের দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে আসে পারিবারিক বিরোধের জেরে ওই চারজনকে খুন করে আপন ছোট ভাই। বেকার ছোট ভাইয়ের সাথে কথাকাটিকাটি ও বাদানুবাদ হতো বড় ভাইয়ের। এ জন্য ছোট ভাই ভাই-ভাবীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন। কৌশলে ঘুমের ওষুধ ও কোমলপানীয় খাইয়ে ভাই-ভাবীকে হত্যা করেন ছোট ভাই। খুনের ঘটনা টের পেয়ে যাওয়ায় তাদের দুই সন্তানকেও ওই রাতে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালে সুনামগঞ্জে দেখা যায়, বাবা ও চাচা মিলে সাত বছরের শিশুসন্তানকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করেন। শিশুটির কান ও যৌনাঙ্গ কেটে নেয়া হয়। শেষে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে এর পেছনের ঘটনা। এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিকটাত্মীয়রা এমন বর্বর অপকর্ম করেছেন। প্রতিপক্ষকে সহজে ঘায়েল করার চিন্তা থেকে শিশুটির অঙ্গহানিও করা হয়।
এসব ঘটনা আমাদের সমাজের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা চরম বিকৃতির সামান্য অংশমাত্র। এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, বিগত বছরগুলোতে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিকারের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। সামান্য জমির জন্য নিকটাত্মীয়দের হত্যা করা হচ্ছে। সমাজিক প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তি অর্জন বা তুচ্ছ কারণে আমরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির সীমাহীন চর্চা এতে ইন্ধন জোগাচ্ছে, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আর আকাশ সংস্কৃতি এ আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিরোধের চরম নোংরামির দৃশ্য নাটক-সিনেমার মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের ট্র্যাজেডি হলো- এই বিপর্যয় রোধের কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement