১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অর্থনীতিতে বৈশ্বিক প্রভাব

দুর্নীতি রোধে অঙ্গীকার জরুরি

-

বাংলাদেশের অর্থনীতির চালচিত্র খুব একটা সুবিধার নয়। করোনা মহামারীর পর তেমনটা আশা করাও সম্ভবত এ মুহূর্তে খুব একটা সমীচীন হবে না। তবে পরিস্থিতি কতটা নাজুক সে বিষয়ে আগ্রহ থাকা স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্ব-অর্থনীতির পূর্বাভাস সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২২ সাল নাগাদ অর্থাৎ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরের বাজেটে অবশ্য সরকারিভাবে আশা করা হয় যে, চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ দিকে বাজেটে সাময়িক হিসাব অনুযায়ী বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের তথ্য প্রকাশ করা হলেও চূড়ান্ত হিসাবে এটি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে আইএমএফ। সংস্থার মতে, এ হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে যেতে পারে। সরকারের হিসাবে সব সময়ই প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখানোর একটি প্রবণতা সবসময়ই থাকে। সেটি জনগণকে আশ্বস্ত করার একটি ভালো কৌশল তাতে সন্দেহ নেই। তবে আইএমএফের হিসাব আমাদের আশাহত করছে।
আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আগামী বছর এটি বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা আরো কমবে। ভোগান্তি বাড়বে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাণিজ্য পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। ফলে বহু দেশে নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির ঝুঁঁকি বেড়েছে। ২০২১ সাল শেষে বিশ্ব-অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব আমরা এড়াতে পারব না। আমাদের জন্য এরই মধ্যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আগামীতে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধির সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে। খাদ্যপণ্যসহ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছেÑ যা গত জুলাইয়ে ছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত বছরের জুনে ছিল ৬ দশমিক ০২ শতাংশ। সম্প্রতি খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়ছে। এটিকে উদ্বেগজনক বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে।
প্রতিবেদনে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চারটি প্রধান ঝুঁঁকির কথা উঠে এসেছে। এগুলো হচ্ছেÑ বৈশ্বিক খাতে প্রত্যাশার চেয়ে পুনরুদ্ধারের গতি কম, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হারে ঊর্ধ্বগতি, শ্রমবাজারে কাজের অভাব এবং পণ্য পরিবহন খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বিষয়ে সতর্ক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে। তাই এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হলোÑ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সবার আগে মানুষের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করা। নাগরিকদের নিশ্চয়তা করা যে, এ মাসে যে আয় করে খরচ করেছে, আগামী মাসেও তার আয় কমবে না, অন্তত একই থাকবে। তাহলে মানুষ খরচ করবে। তখন অর্থনীতিতে ভোগ বাড়বে। পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গতি পাবে। একই সাথে ভোক্তার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের মধ্যেও তার উৎপাদিত পণ্য বিপণনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগ থেকে মুনাফা আসবে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমবাজার এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। মানুষ কাজ পাচ্ছে না। যারা চাকরি হারিয়েছেন বা যাদের বেতন কমেছে, যাদের ব্যবসায় বন্ধ হয়ে গেছে তাদের জীবন এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে পণ্যের জোগান স্বাভাবিক করার ব্যবস্থাটাই সবার আগে করা জরুরি। আর সব কিছুর ঊর্ধ্বেÑ দেশে দুর্নীতির যে অবাধ বিস্তার তা রোধ করা না গেলে পরিস্থিতির উন্নতির আশা বাতুলতা মাত্র। কারণ দুর্নীতির কারণে একটি শ্রেণী আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও তার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। সেটি আরো তীব্রতর হলে সাধারণ মানুষের স্বস্তির কোনো জায়গা থাকবে না। দুর্নীতি রোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

 


আরো সংবাদ



premium cement