২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা

কঠোর নজরদারি চাই

-

রান্নার প্রধান মসলা পেঁয়াজের বাজার দেশে হঠাৎ করে অস্থির হয়ে উঠেছে। রাজধানীতে খুচরা বাজারে তিন দিনে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহেও দাম ছিল ৪০-৫০ টাকা। আর এক মাস আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪২-৪৫ টাকা। গত সপ্তাহের শেষদিকে পাইকারি বাজারে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৩৬ টাকা দরে। এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৪ টাকা। আর আমদানি করাটা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৩২ টাকা কেজি। এখন ৪৭-৪৮ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে দেশী পেঁয়াজের দাম ৩৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শুধু পেঁয়াজ নয়, দাম বেড়ে যাওয়ার তালিকায় আরো রয়েছে ভোজ্যতেল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, আদা, হলুদ ও রসুন। এসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের মতো। গত বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। তবে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ পচে যায়। এ হিসাবে প্রকৃত উৎপাদন ১৯ লাখ ১১ হাজার টন। চাহিদার ঘাটতি মেটাতে ইতোমধ্যে আমদানি করা হয়েছে চার লাখ ৫৯ হাজার টন। সে হিসাবে দেখা যায়, এ মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার কথা। তার পরও কেন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে; এই প্রশ্নের সদুত্তর সরকার, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক কেউ দিতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, মৌসুমের শেষ পর্যায় হওয়ায় বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ কম। আর ভারতে দাম বাড়ায় আমদানিও কমেছে। ফলে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, অসাধু ব্যবসায়ী চক্র পেঁয়াজ মজুদ রেখে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজ মজুদ রেখে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করতে চাইছে। তারা মনে করেন, এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
দেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদার ৫৭ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা বিদেশ থেকে, প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এ কারণেই পেঁয়াজের ব্যাপারে ভারত কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রভাব পড়ে দেশের বাজারে। ২০১৯ সালে ভারত যখন পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল, তখন দেশে মসলাটির দাম রেকর্ড ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছিল; কিন্তু এবার সেরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই বলা যায়, অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের কারসাজি এবং সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল করতে বাজার নজরদারিতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্য এতে সাময়িক উপশম হবে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক সমাধানের চেয়ে স্থায়ীভাবে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে উৎপাদন বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ। চাহিদার পুরোটা পূরণ করতে হলে দেশেই অন্তত ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে হবে। তাহলে যেটুকু নষ্ট হবে, তা বাদ দিয়ে বাকি পেঁয়াজ দিয়ে দেশের চাহিদা পুরোটা পূরণ সম্ভব হবে। এ জন্য প্রয়োজন উৎকৃষ্ট বীজের ঘাটতি মেটানো, সমন্বিত চাষাবাদ, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা এবং আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। গ্রীষ্মকালীন উৎপাদনে গেলে এবং চরের জমি অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে দেশে পেঁয়াজের বর্তমান ঘাটতি মেটানো সম্ভব।

 


আরো সংবাদ



premium cement