২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ফলন ও সরবরাহ স্বাভাবিক

নিত্যপণ্যের দাম তবু বাড়ছেই

-

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থাই এখন আর কার্যকর বলে মনে হয় না। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ক্রমে বাড়ছে মানুষের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের দাম। বাজারের উত্তাপে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের। বাজার করতে এসে বিষণœ মনে প্রায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে বাঁচার উপায় থাকছে না তাদের। মহামারীর কারণে কপাল পুড়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষের। সেই অভিঘাত এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে। কলকারখানা, অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু এসবই বাইরের দৃশ্য। ভেতরে ভেতরে আপাত অদৃশ্য এক পরিস্থিতি সর্বত্র বিদ্যমান। অনেক অফিসে কাজ চালানো হচ্ছে অর্ধেক জনবল দিয়ে। মহামারীর সময় যাদের চাকরি চলে গেছে, তাদের বেশির ভাগই চাকরি ফিরে পাননি। বিপুলসংখ্যক মানুষের বেতন-ভাতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সেটা বাড়ানোর কোনো আলোচনাও কোথাও নেই। ব্যবসাপাতি বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নানা কারণে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না। পুঁজির অভাব এর একটি কারণ। বড় বড় শিল্পকারখানার মালিকরা প্রণোদনার অর্থ পেয়ে নতুন নতুন ব্যবসায়ে এবং অন্যত্র বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু প্রণোদনার অর্থ ক্ষুদ্র এমনকি মাঝারি ব্যবসায়ীদের পর্যন্ত আসার পথ খুঁজে পায়নি। এই পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের বাজারের আগুন মানুষের চামড়া পোড়াচ্ছে।
রাজধানীর বাজারে শুধু কচুরমুখী ও পেঁপে ছাড়া অন্য সব সবজির দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেশি। কাঁচামরিচের দাম উঠে গেছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। যে ব্রয়লার মুরগির দাম এক মাস আগে ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা সেটি এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে গত শুক্রবার বিক্রি হয় ১৬০ টাকা কেজি দরে। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম দফায় দফায় বেড়েছে। গত মাসের শুরুর দিকে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম কয়েক দফা বেড়ে এখন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মুরগির সাথে পাল্লা দিচ্ছে ডিমও। ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
পেঁয়াজের দামও কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা। এভাবে ভোজ্যতেল, গরুর গোশত, ইলিশ মাছ ইত্যাদি সব জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের আমিষের চাহিদা পূরণে নির্ভর করত যেসব কম দামের মাছের ওপর, সেগুলোও চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। রফতানির কারণে ইলিশের দাম অনিয়ন্ত্রিত। সবচেয়ে ছোট আকারের একটি ইলিশ কিনতে হলেও হাজার টাকার নোট ভাঙাতে হবে, যা হয়তো একজন নিম্ন আয়ের মানুষের সারা সপ্তাহের কাঁচাবাজারের বাজেট। আর এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে। ভোজ্যতেল খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৫৩ টাকায়। দাম বেড়েছে খুচরা আটার; প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। খাসির গোশত ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
পণ্যমূল্য বেড়ে যাবার কারণ হিসাবে বিক্রেতারা সেই কথাই বলেন যা তারা বলে আসছেন যুগ যুগ ধরে। তারা বলছেন, পাইকারিতে দাম বাড়ায় তারা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাইকারিতে দাম কেন বাড়ে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। সবজির ফলন যথেষ্ট, মাছ, গোশত, আটা, চিনি, তেল সবকিছুরই সরবরাহ ঠিক আছে। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি নেই যাতে বাজারে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত বা অনিশ্চিত হতে পারে। তাহলে পণ্যমূল্যে অস্থিরতা কেন? সরকারের কোনো দফতর সেই ব্যাখ্যা দেয়ার দায় বোধ করে না। কারণ মানুষ তাদের কষ্টের কথা বলার জন্য মাঠে নামেনি; সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেনি। মানুষকে ময়দানে নামিয়ে আনার দায়িত্ব যে রাজনীতিকদের তারা ঘরে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। তাই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ অবসানেরও কোনো আশু সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement