১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রোহিঙ্গা নেতা খুন

দোষীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিন

-

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে। বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদেরই একটি অংশ এই খুনের সঙ্গে জড়িত। স্বদেশ থেকে উৎখাত হওয়া একটি নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর নেতাকে নিজেদের লোকেরাই কেন হত্যা করলো সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা এমন একটি পশ্চাৎপদ সম্প্রদায় যাদের পক্ষে কথা বলার মতো যোগ্য নেতা নেই। নিজেদের দুঃখ দুর্দশা ও অধিকারহীনতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জোরালোভাবে উপস্থাপনের উপায় নেই। মুহিবুল্লাহ তাদের এমন একজন কাক্সিক্ষত নেতা হয়ে উঠছিলেন, যিনি রোহিঙ্গাদের হয়ে কথা বলার দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের উপদলীয় কোন্দল হয়তো এর কারণ। তবে এ ঘটনায় লাভবান হলো রোহিঙ্গাদের সমূলে উৎখাতকারী মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী।
রোহিঙ্গাদের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত। বাংলাদেশ চাইলেও এ সঙ্কট থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ এ ইস্যুটি খুব দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারছে বলে মনে হয় না। রোহিঙ্গাদের প্রতি এক ধরনের উদাসীনতা আমাদের আছে। আমরা কোনোভাবেই পূর্ণ মানবিক মর্যাদা দিয়ে, সহযোগী হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। আশ্রয় দিলেও তাদের জন্য তেমন কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। আশ্রয়শিবিরে ন্যূনতম রাস্তাঘাট নেই। নেই বিদ্যুৎ। অরক্ষিত অবস্থায় উদ্বাস্তু শিবিরে তাদের বসবাস।
মুহিবুল্লাহ ছিলেন রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সবে ধন নীলমণি’ এক নেতা। তিনি সত্যিকারার্থে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভেতর থেকে কাজ করছিলেন। তার রাজনৈতিক কার্যালয়টি বাঁশের তৈরি। পাশেই স্ত্রী-পুত্র নিয়ে থাকেন। চেয়ার টেবিল নেই। মেঝেতে বসে দাফতরিক কাজ করতেন। মসজিদে এশার নামাজ শেষে নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা তার সহচরদের সাথে মিশে যায়। এর আগেও তার জীবননাশের হুমকি ছিল।
কয়েক শত বছর ধরে মিয়ানমারের রাজনীতিতে রোহিঙ্গা নেতাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সংসদেও তাদের সদস্য ছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চক্রান্তের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বশূন্য করা হয়। কাউকে হত্যা করে, কাউকে পদপদবি বঞ্চিত করে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে দুর্বল জাতিতে পরিণত করা হয়। সর্বশেষ মিয়ানমারের কোনও জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ ছিল না। রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি নেতৃত্বহীন করতে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করেছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রযন্ত্র। ফলে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা শিবিরেও যোগ্য নেতার অভাব ছিলো। মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডও কার্যত মিয়ানমারের পরিকল্পনারই বাস্তবায়ন। হত্যাকাণ্ড যাদের মাধ্যমেই ঘটানো হয়ে থাকুক এর সুবিধাটুকু মিয়ানমারের জান্তার ঝুলিতেই যাবে।
মুহিবুল্লাহর হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের কয়েকটি দেশ, জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন শোক ও নিন্দা জানিয়েছে। তবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো গাফিলতি না করে সময়মতো রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে কার্যকর অবস্থান নিলে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীটি রাষ্ট্রহীন নাগরিকত্বহীন অবহেলিত সম্প্রদায়ে পরিণত হতো না। তাদের উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ, যাতে রোহিঙ্গারা পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা নিয়ে স্বদেশে ফিরতে পারে। আর বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি আন্তরিকতা নিয়ে পূর্ণ মানবিক মর্যাদা দিয়ে তাদের পাশে থাকা। অবহেলার কারণে যেন রোহিঙ্গা শিবিরে বাইরের শক্তিগুলো বিবদমান পক্ষগুলোকে ইন্ধন জোগাতে না পারে সেদিকে নজর দেয়া দরকার। এখন দ্রুততার সাথে মুহিবুল্লাহর খুনিদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সাহস না পায়।


আরো সংবাদ



premium cement