২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বঙ্গোপসাগরে বারবার লঘুচাপ

বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

-

বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ায় বঙ্গোপসাগরের পানির তাপমাত্রা বেড়েছে। সমুদ্রে পানির তাপমাত্রা এখন এত বেশি যে, ঘন ঘন লঘুচাপের সৃষ্টি হয়ে রূপ নিচ্ছে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনই এর জন্য দায়ী। সামনের দিনগুলোতে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ অথবা নিম্নচাপ এবং তা থেকে বাড়বে ঘূর্ণিঝড়। কয়েক দিন আগেও একটি লঘুচাপ সাগর থেকে স্থলভাগে উঠে আসে। সাগরে একের পর এক লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়াকে বড় ঝড়ের আলামত হিসেবে দেখছেন আবহাওয়াবিদরা। এ বছরও বিধ্বংসী ঝড়ের আশঙ্কা করছেন তারা। বাংলাদেশে সেপ্টেম্বরে লঘুচাপ হলেও সাধারণত ঘূর্ণিঝড় হয় না। কিন্তু তুলনামূলক শান্ত সেপ্টেম্বরেও গোলাবের মতো দুর্বল ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ায় এ শঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার মতো যথেষ্ট পরিবেশ রয়েছে। সাধারণত সাগরের উপরিতলের পানির তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই সেখানে লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপরিতলের পানির তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। সমুদ্রের পানির উচ্চতা, উপরিতলের তাপমাত্রা এবং পানির যত গভীরে তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তার ওপর নির্ভর করে সাগরের পানিতে কী পরিমাণ লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় হবে। সাধারণত বঙ্গোপসাগরে অক্টোবর-নভেম্বরে কমপক্ষে দু’টি ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।
আমাদের উপকূলসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এপ্রিল-মে ও অক্টোবর-নভেম্বরে পানির তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। সমুদ্রের ৩০ মিটার গভীর পর্যন্ত তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে অনেক সময় ৫০ মিটার গভীর পর্যন্তও পানির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি পাওয়া যায় বলে গবেষণায় প্রমাণিত। ফলে ঘন ঘন ঝড় ও নিম্নচাপ হচ্ছে। এর দু’টি প্রধান কারণ- বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং গ্রিন হাউজ গ্যাসের কারণে বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এ ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে ঘটে যাওয়া লা নিনার একটি প্রভাবও রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনা সঙ্ঘটিত হলে ট্রেড উইন্ড স্বাভাবিকের চেয়ে শক্তিশালী হয়। এতে করে ওই মহাসাগরের গরম পানি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা থেকে এশিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়। এটি যখন বঙ্গোপসাগরের দিকে আসে তখন লঘুচাপ-নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।
বায়ুমণ্ডলে যে তাপমাত্রা প্রবাহিত হয় এটি শেষ পর্যন্ত স্থলভাগে থাকে না। গ্রিন হাউজ গ্যাস ওপরে গিয়ে ঠাণ্ডা হতে পারে না। সমুদ্রের পানি তাপের ৮০ শতাংশের বেশি শুষে নেয়। এ কারণেও সমুদ্রের পানিতে তাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকছে। লা নিনার কারণে যে ট্রেড উইন্ড হয়ে থাকে তার প্রভাবেও গরম পানি প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিক থেকে ক্রমশ পশ্চিমে ভারত মহাসাগরে চলে আসে। বঙ্গোপসাগরেও ওই গরম পানির প্রবাহের আঁচ লাগে। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের গরম পানির সাথে পূর্ব দিক থেকে আসা গরম পানি যোগ হলে সেখানে পানিতে নতুন আন্দোলনের সৃষ্টি করে। তাতে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল এলাকাজুড়ে গরমে সেখানকার পানি বেশি বাষ্পায়িত হয় মাঝে মধ্যে। তাতে মেঘ জমে। যে এলাকায় মেঘের সৃষ্টি হয় সেখানকার সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকে। সেখানকার অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা ও দূরবর্তী এলাকার গরম পানি মিশলে গরম পানির এলাকা থেকে পানি ঠাণ্ডা পানির দিকে যেতে থাকে। এর যে একটি প্রভাব, তা-ও শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে পড়ে এবং এখানকার পানিতে চাপ সৃষ্টি হয়। এসব কারণে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে।
যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের ভূমিকা গৌণ, তবু বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়, বন্যার কবলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই এখন আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে; যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়। সে ক্ষেত্রে প্রথমত আবহাওয়া বিজ্ঞানের উন্নতি করা প্রয়োজন। যাতে দুর্যোগের পূর্বাভাস যথাসময়ে সঠিকভাবে জানা যায়। একই সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনীয় টেকসই প্রকল্প নেয়া।


আরো সংবাদ



premium cement