২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নালায় পড়ে বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে

চট্টগ্রাম নগর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার

-

এতদিন প্রধান আলোচনা ছিল চট্টগ্রাম নগরীর অসহনীয় জলবদ্ধতা। কয়েক দশক ধরে এটি নগরপিতা নির্বাচনের প্রধান ইস্যু। যদিও সিটি নির্বাচন বলতে কার্যকর কিছু এখন অবশিষ্ট নেই। সরকারের পছন্দের ব্যক্তিরা বিনা প্রতিযোগিতায় মেয়র ও কাউন্সিলর হয়ে যাচ্ছেন। নতুন নতুন নগরপিতা বিপুল প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসছেন বটে; কিন্তু জলাবদ্ধতা দূর হওয়া দূরের কথা বরং তা আরো বিস্তৃত হচ্ছে। আগের চেয়ে বেশি মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন। এর সাথে নগরীর হাজারো সমস্যা তো আছেই। এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে নর্দমায় পড়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা। এখন এই শহরে নিয়মিত বিরতিতে নালায় পড়ে নাগরিকরা প্রাণ হারাচ্ছেন। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এ অবস্থায় নগরীর বিভিন্ন পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিবাদ শুরু করেছে। একে অন্যের ওপর এই ঘটনার দায় চাপাতে চাইছে।
গত সোমবার রাতে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ের একটি নালায় তলিয়ে যান সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রথমবর্ষের ছাত্রী। তার আর প্রথমবর্ষের পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। যেটি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এর আগে ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে পা পিছলে নালায় পড়ে তলিয়ে যান ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ। এক মাস পার হয়ে গেলেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার আগে ৩০ জুন মেয়র গলির চশমা খালে পড়ে এক যাত্রীসহ অটোরিকশাচালক মারা যান। চলতি বছরেই চারজন এভাবে প্রাণ হারালেন উন্মুক্ত নর্দমায় পড়ে। যদিও এ শহরে নালায় পড়ে মানুষের প্রাণ হারানোর ঘটনা আরো আগে থেকে নিয়মিত বিরতিতে হয়ে আসছিল। ২০১৭ সালে এক সামরিক কর্মকর্তা এবং ২০১৫ সালে যাত্রীসমেত আরেক অটোরিকশাচালক প্রাণ হারান।
প্রতিটি ঘটনাই নগরীর নিরাপদ নালা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট ছিল। নগর কর্তৃপক্ষ সংবেদনশীল হলে কোনো প্রাণহানির আগেই তারা পুরো শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিত। বিশেষ করে চট্টগ্রাম শহরে বিগত কয়েকজন নগরপিতার খুব নামডাক শোনা যায়। তারা বিশেষভাবে দক্ষ ও পারদর্শী হিসেবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। দেখা যাচ্ছে, শহরটির নির্মাণ ও সংস্কার সাধনে তারা তাদের সেসব পারদর্শিতা কাজে লাগাতে পারেননি। খবরে জানা যাচ্ছে, শহরের বহদ্দারহাট থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের পাশে এক কিলোমিটার লম্বা ২০ ফুট প্রস্থের নালা। এ নালার বেশির ভাগই খোলা। একইভাবে মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে খোলা নালা। চট্টগ্রাম নগরীর ভূমির অবস্থাটা পুরো সমতল নয়। ছোটখাটো পাহাড় ও উঁচু-নিচু জায়গা শহরজুড়ে। এর মধ্যে নগরজুড়ে এমন খোলা নালা খুবই বিপজ্জনক। নালায় প্রায়ই জীবনহানি ঘটলেও কর্তৃপক্ষ সচেতন হয়নি। আগের সব ঘটনার মতো এই ছাত্রীর প্রাণ হারানোর ঘটনাও হয়তো একসময় সবাই ভুলে যাবে।
নগরীতে চলছে বড় বড় উন্নয়নের কাজ। অভিযোগ উঠছে, নালায় পড়ে প্রাণ হারানোর একটি কারণ এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এসব প্রকল্পের কাজ করার সময় নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। এসব কথা বলা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। অন্য দিকে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায় দিতে চাইছে সিটি করপোরেশনকে। নাগরিক সমাজ এসব বাদানুবাদে বিরক্ত। তারা চাইছেন সঙ্কটের সমাধান। নালায় পড়ে উপর্যুপরি মানুষের প্রাণ হারানোর প্রকৃত দায় কার তারা জানতে চান। এ নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। নগরবাসী চান নগরীর জলাবদ্ধতার স্থায়ী অবসান, যাতে খোলা নালায় পড়ে কাউকে মরতে না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement