২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রেলপথের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

আস্থা ধরে রাখতে হবে

-

আমাদের দেশে রেলপথ এখনো ভ্রমণের সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। সড়কপথের মতো রেলে যখন তখন দুর্ঘটনা ঘটে না। ডাকাতি-ছিনতাইয়ের শিকার হতে হয় না। খুব তাড়া না থাকলে বেশির ভাগ যাত্রীই ভ্রমণের জন্য রেলপথ বেছে নেন। কিন্তু সম্প্রতি রেলের ওপর মানুষের এ আস্থা অটুট থাকছে না। কারণ রেলপথেও নিরাপত্তা পরিস্থিতির দৃশ্যমান অবনতি ঘটছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনে ডাকাতির ঘটনা মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। ডাকাতরা ট্রেনের ছাদে উঠে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয়। এতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ডাকাতের ছুরিকাঘাতে নাহিদ ও সাগর নামে দুই যাত্রীর মৃত্যু হয়। ছুরিকাঘাতে আহত হন আরো এক যাত্রী। যারা নিরাপদ মনে করে ট্রেনে যাতায়াত করেন এ ভয়ঙ্কর ডাকাতির ঘটনা তাদের আতঙ্কিত করেছে। অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। কারণ স্থলপরিবহন ব্যবস্থায় নিরাপত্তার জন্য একমাত্র রেলেরই নিজস্ব পুলিশ রয়েছে। আছে রেলপুলিশের নিজস্ব লোকবল, থানা, ফাঁড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা। এত কিছুর পরও চলন্ত ট্রেনে ডাকাতের হাতে দুই যাত্রীকে প্রাণ দিতে হলো। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এতে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। বলা হচ্ছে, এই ডাকাতচক্র দীর্ঘ দিন ধরে ট্রেনে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছিল। তারা ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দর ও টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে উঠত। এর অর্থ হলো, রেলপথে কারা কিভাবে কোত্থেকে অপরাধ ঘটায় সেসব তথ্য পুলিশের কাছে আছে। কিন্তু সেসব অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন?
জানা যায়, দেশে মোট প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে অন্তত ৭০০ কিলোমিটারই নাকি অরক্ষিত। অরক্ষিত ৭০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯৭ স্পট আছে যেগুলো ‘ভয়ঙ্কর’ হিসেবে চিহ্নিত। খবরে বলা হয়েছে, রেলওয়ের কোনো স্টেশনেই স্ক্যানিং মেশিন নেই। ফলে সন্দেহজনক যাত্রীদের তল্লøাশি বা শনাক্ত করার উপায় নেই। স্টেশনগুলোতে রয়েছে একাধিক প্রবেশ ও নির্গমন পথ। তাই সব স্টেশনেই নির্দিষ্ট স্থান ছাড়াও ট্রেনে ওঠানামা করা সম্ভব। অপরাধীরা এ সুযোগই নিচ্ছে।
রেলে ডাকাতি ছাড়াও নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। সবচেয়ে বেশি যে অপরাধ ঘটে সেটি হলো মাদকপাচার ও চোরাচালান। এ ছাড়াও আছে পাথর নিক্ষেপের মতো প্রাণঘাতী ঘটনা। বেশ ক’জন মানুষ পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় মারা গেছেন। দেশের ২০টি জেলায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটে। ৭০টি স্পট চিহ্নিতও করা হয়েছে; যেখানে সবচেয়ে বেশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
অপরাধের ক্ষেত্রে অনেকসময় রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার পরও অপরাধ দমনে কর্তৃপক্ষের লক্ষণীয় উদ্যোগ সামান্যই। অনেক বড় ঘটনায়ও মামলা হয় না। সাধারণ ডায়েরি করা হলেও তদন্ত ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে থাকে।
রেল পুলিশের জনবলের স্বল্পতা রয়েছে। জনবলের অভাবে দেশের অর্ধেক ট্রেনে গার্ড থাকে না। মোট ৪০০ স্টেশনের মধ্যে মাত্র ২৪টিতে থানা ও ৩৩টিতে ফাঁড়ি রয়েছে। এ সবই সত্য। তবে এটাও সত্য, যেকোনো ঘটনায় জনবলের স্বল্পতা এদেশে একটি মোক্ষম অজুহাত। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা রেলওয়েকে সম্পূর্ণ নিরাপদ দেখতে চাই। সার্বক্ষণিক নজরদারি ও জোরালো নিরাপত্তাব্যবস্থা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীদের আস্থা হারাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement