২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাভারে ছয় নদীতে ভয়াবহ দূষণ

শিল্পবর্জ্য পরিশোধন অপ্রতুল

-

সাভারের হেমায়েতপুরের ট্যানারি শিল্প ও পোশাক কারখানার বর্জ্যে আশপাশের ছয়টি নদীÑ বংশী, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদ ভয়াবহভাবে দূষিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার বংশী ও ধলেশ্বরী। এ দু’টি নদী দূষণের ৮০ শতাংশই হচ্ছে ট্যানারি-বর্জ্য।ে বাকি ২০ শতাংশ অন্যান্য শিল্পবর্জ্য।ে এই দু’টি নদীর সাথে অন্য চারটি নদ-নদীর সংযোগ থাকায় সেগুলোর পানিও দূষিত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পোশাক কারখানা ও ট্যানারি-বর্জ্যে পানি কালো রঙ ধারণ করছে। চামড়াশিল্পনগরী থেকে মাটির নিচ দিয়ে শতাধিক প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, চামড়াশিল্পনগরীতে ১৫৫টি কারখানা কার্যক্রম শুরু করেছে। কারখানায় তরল, কঠিন ও বায়বীয়Ñ এ তিন ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হয়। প্রতিদিন যে পরিমাণ তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়, সেগুলো পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। এগুলো পরিশোধনে কমপক্ষে দু’টি কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) প্রয়োজন ছিল; কিন্তু স্থাপন করা হয়েছে একটি। সেটিও সার্বক্ষণিক সচল থাকে না। এ ছাড়া নতুন নতুন কারখানা চালু হওয়ায় চামড়া প্রক্রিয়াজাতের সক্ষমতা বেড়েছে। ফলে বর্জ্যরে পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু একটি সিইটিপি দিয়ে সব বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। এগুলো কারখানা থেকে বিভিন্ন নালা দিয়ে পাশের ধলেশ্বরীতে গিয়ে পড়ছে। এর মধ্যে আছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ক্রোমিয়াম, ক্লোরিন, নাইট্রিক অক্সাইড, সালফিউরিক এসিড, কার্বনসহ নানা রাসায়নিক দ্রব্য, যা মানবদেহে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার ও চর্মরোগ সৃষ্টি করে।
কঠিন বর্জ্য ডাম্পিং ইয়ার্ডে ফেলা হয়। মাত্র ছয় একর জমিতে ডাম্পিং ইয়ার্ড করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের চেয়ে যথেষ্ট নয়। ফলে ডাম্পিং ইয়ার্ড উপচে কঠিন বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তায় ও নদীতে। পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চার দিকে। এগুলোতে থাকে নানা রাসায়নিক দ্রব্য। চামড়া পরিশোধন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের কিছু অংশ বায়বীয় পদার্থে রূপ নেয়। তা বাতাসে ছড়িয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টির পাশাপাশি বায়ু দূষিত করছে। আর বর্ষার দুই মাস ছাড়া পুরো বছর পানিতে এত দুর্গন্ধ থাকে যে, নাকে রুমাল চেপে চলাফেরা করতে হয়।
প্রয়োজনীয় অনেক কাজে ছয় বছর আগেও বংশী ও ধলেশ্বরীর পানি ব্যবহারে করা যেত। এখন কোনো কিছুতেই ব্যবহার করা যায় না। এসব নদীর পানি আগে এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে, তলদেশের বালু পর্যন্ত দেখা যেত। আগে অগণিত জেলে সারা বছর মাছ ধরেও শেষ করতে পারতেন না। আর কয়েক বছর ধরে মাছ না পাওয়ায় জেলেরা পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ভরা বর্ষাতেও বংশী ও ধলেশ্বরীতে মাছ মিলছে না। ধারণা করা হয়, বুড়িগঙ্গার মতো এসব নদীতেও মাছ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অনুপাতে অক্সিজেন নেই। এজন্য জলজ উদ্ভিদের অস্তিত্বও বিপন্ন। আর শুষ্ক মৌসুমে পানি কালো হয়ে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাতাসেও ছড়িয়ে পড়ছে বর্জ্যরে দুর্গন্ধ। এতে চার পাশের পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দূষিত পানি ব্যবহার করায় চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্ট বাড়ছে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। শুধু তাই নয়, অনেকের জীবন-জীবিকা পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে সরকার চামড়াশিল্পনগরী সাভারে স্থানান্তর করেছে। কিন্তু তদারকি ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না করায় এখন সাভার ও আশপাশের ছয়টি নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরও এ ব্যাপারে নির্বিকার। নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রাণ হচ্ছে দেশের নদ-নদী। বাস্তবে নদী বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। কিন্তু এর জন্য সরকারকে তৎপর হতে হবে। শুধু জনসচেতনতায় নদীদূষণ তথা পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়। এর মোকাবেলায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা জরুরি বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement