২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট

দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়

-

বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট করে প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়নি আজো। সরকারের কোনো দফতর নিজে থেকে এ কাজটি করে দেয়নি। বিদেশীরা শর্ত দেয়ার পর কেবল একটি বিমানবন্দরে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সেটি এখনো চালু করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে যে দীর্ঘসূত্রতা চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার সেটি চালু হতে পারে।
করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে আমাদের বহু প্রবাসী কর্মী দেশে এসে আটকা পড়েন। তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব। তাই এ জন্য যা যা করণীয় সেসব পদক্ষেপ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে নেয়ার কথা। এ জন্যই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আছে। প্রবাসী কর্মীদের সার্বিক কল্যাণের বিষয় দেখভাল করা তাদের দায়িত্ব; কিন্তু সে দায়িত্ব পালিত হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ সেখানে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীদের ফিরে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে টেস্ট করার শর্ত দেয়। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিরাত শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে যেতে হলে যাত্রার ৪৮ এবং ৬ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টের ভেতরে আরটি-পিসিআর টেস্ট করতে হবে। এই শর্ত দেয়ার পর বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের ‘হুঁশ’ হয়।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা শনাক্তে পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশ দেন। তারপর প্রায় পুরো মাস চলে গেছে। এর মধ্যে কেবল ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ল্যাব ও যন্ত্রপাতি বসিয়ে টেস্টের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। গত রোববার ছয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ১২টি আরটি-পিসিআর মেশিন স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও বেসামরিক বিমানমন্ত্রী এবং তিন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে তদারকি করে কাজটি সম্পন্ন করেছেন। এটা খুশির বিষয় নিঃসন্দেহে। এর ফলে খুব দ্রুত টেস্ট করে ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে। আরটি-পিসিআর মেশিনের সক্ষমতা যাচাইয়ের পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল সফল। এখন স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার বিষয়টি লিখিতভাবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচককে জানালে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। তবে অন্য দু’টি বিমানবন্দরে কবে নাগাদ এই ব্যবস্থা করা যাবে তার কোনো উল্লেখ নেই।
আমরা জানি, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দেশই বাংলাদেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দেশ সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে বা শিথিল করেছে। তবে বিমানবন্দরে টেস্ট করে তার ফলাফল নিয়ে বিমানে ওঠার শর্ত দেয় দেশগুলো; বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী প্রবাসী কর্মী কাজ করেন।
যতদূর জানা যায়, বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই করোনা টেস্টের ব্যবস্থা আছে। সব দেশের সরকারই নিজেদের উদ্যোগে এ ব্যবস্থা করেছে; কোনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় দেশের শর্ত আরোপের অপেক্ষায় থাকেনি। কোনো দেশেই এ ব্যবস্থার অভাবে বিদেশগমনেচ্ছুদের আটকে থাকতে হয়েছে বা প্রবাসী কর্মীদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। এটা ঘটতে যাচ্ছে কেবল বাংলাদেশে। কারণ অসংখ্য প্রবাসী কর্মী এখনো দেশে আটকে আছেন এবং বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট শুরুর জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। সময়মতো কর্মস্থলে যোগ দিতে না পারলে তাদের চাকরি খোয়াতে হবে। কিন্তু যে প্রবাসী কর্মীটি সরকারের ব্যর্থতার কারণে কর্মসংস্থান খোয়ালেন তার কী হবে? এর দায়ভারই কে নেবে? এ প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোরই দেয়ার কথা; কিন্তু দেশে এখন যেন চলছে ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’। অর্থাৎ, কেউ কারো কাছে জবাবদিহি করবে না, কেউ দায় স্বীকার করবে না। কিছু প্রবাসী কর্মী চাকরি খোয়ালে কার কী এসে যায়?

 


আরো সংবাদ



premium cement