২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিদেশে থেকেই সরকারি চাকরি

বিধিবিধান না মানা হলে বিশৃঙ্খলা বাড়বে

-

বাংলাদেশে সরকারি কাজে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যায়-অনিয়ম-দুর্নীতিতে প্রতিনিয়ত নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলায় নিযুক্ত পুলিশ বাহিনী দেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করছে। লিপ্ত হচ্ছে মানুষকে প্রতারিত করার কাজে। সম্প্রতি ই-অরেঞ্জ নামের একটি ‘হায়হায় কোম্পানি’ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর প্রকাশ করা হয়। দেখা গেল, এর পেছনে ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি পালিয়ে ভারত গিয়ে আটক হন। সেখানে থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে উপর্যুপরি চিঠি দিয়েও তাকে ফেরানো যায়নি। দেশ ছেড়ে পালানোর পর জানা যাচ্ছে, তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল অর্থ কামিয়েছেন। নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে ওই সব সম্পদ জমিয়েছেন। অন্য মানুষের ভবনও দখল করে রেখেছিলেন। শুধু পুলিশ নয়, অন্য কোনো একটি প্রতিষ্ঠান এমন নেই যার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি করছেন না। এমনকি খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাকেও দুর্নীতিতে লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করল, বিদেশে থেকে বাংলাদেশে চাকরি করার খবর।
জানা যায়, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সিলেট জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভারতে থেকেই বাংলাদেশে চাকরি করে যাচ্ছেন। তার বাড়ি ভারতে। তিনি আসা-যাওয়া করে নিজের সুযোগ-সুবিধা মতো এ দেশে চাকরি করেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো লিখিত আকারে উত্থাপিত হয়েছে সংসদীয় কমিটিতে। গত রোববার সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এ কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রকৌশলী তুষার কান্তি নিয়ম মেনে চলেন না। শুনেছি, তিনি ভারতের পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন।’ কমিটির এক সদস্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তার কাছে অভিযোগ রয়েছেÑ কলকাতায় ওই প্রকৌশলীর বাড়িগাড়ি রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে থাকেন। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশী কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে এভাবে চাকরি করতে পারেন না। বিধি অনুযায়ী এই চাকরিতে তিনি কোনোভাবেই আবেদন করার যোগ্যতা রাখেন না। এত গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও সরকারের শীর্ষ একটি পদে তিনি চাকরি করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি চাকরির অন্যান্য শর্ত পরিপালনের পরিবর্তে তা ভঙ্গ করে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠার সাথে সাথে সেটি তদন্ত হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। সে ক্ষেত্রে যে খবর পাওয়া গেছে, সেটি আরো উদ্বেগজনক। তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে। তিনি একজন যুগ্ম সচিবকে দিয়ে তদন্ত করান। এর প্রতিবেদনে তিনি নিশ্চিত কোনো ফলাফল দেননি। পত্রিকার খবরে জানা যায়, তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি তুষারকে দোষী সাব্যস্তও করেননি, আবার নির্দোষও দাবি করেননি। একটি গুরুতর ব্যাপার নিয়ে তদন্তের এমন ফলাফল হওয়াটা অস্বাভাবিক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিদেশে বসবাসের, বিদেশী পাসপোর্ট ব্যবহারের এবং ইচ্ছেমতো অফিস করার। এ ক্ষেত্রে হয় তিনি উত্থাপিত অভিযোগে অভিযুক্ত, না হয় তিনি নির্দোষ। কোনো ব্যাপারে যখন নির্ধারিত কর্মকর্তারা কোনো কথা পরিষ্কার করে বলতে পারেন না, সেখানে আরো বেশি ‘ভেজাল’ থেকে যাওয়ার শঙ্কা থেকে যায়।
এর আগেও ভারতে থেকে বাংলাদেশে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছিল। কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে বেতন উঠিয়ে নেয়া হয়। আমরা জানি না, ওই সব উত্থাপিত অভিযোগের কোনো যথাযথ তদন্ত হয়েছে কি না। তবে এবারে যে অভিযোগটি উঠল এবং তারপর তদন্তের যে দুর্বল উদ্যোগ দেখা গেল সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। তুষার কান্তি যদি বাংলাদেশের সরকারি চাকরির নির্দিষ্ট বিধিমালা ভঙ্গ করেন, সেগুলো যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এ ধরনের অন্যায় সুবিধা নিতে পারেন আরো অনেকে। এতে আমাদের সরকারি চাকরির শৃঙ্খলা আরো বেশি করে ভেঙে পড়তে পারে। অন্য দিকে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলেও সেটি স্পষ্ট করতে হবে। কেউ যদি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অভিযোগ উত্থাপন করে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মোট কথা, রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সরকারি চাকরির নিয়ম-কানুন ঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে, যাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হয়ে দক্ষভাবে কাজ সম্পন্ন করা যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement