১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনায় বিধ্বস্ত পর্যটন খাত

প্রণোদনা পাননি একজনও

-

করোনা মহামারীতে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের সব খাতই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। শিল্প খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বল্প সুদে প্রণোদনা ঋণ পেয়েছেন এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু যে খাতটি সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত সেই পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা কেউ সেই সুবিধা পাননি। সহযোগী একটি পত্রিকায় গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের ৪ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেয়ার নির্দেশনা দেয় সরকার; কিন্তু প্রজ্ঞাপনে ভুল থাকায় এ খাতের একজনও ওই ঋণসুবিধা পাননি। প্রজ্ঞাপনে পর্যটন খাতে শুধু হোটেল-মোটেল ও থিম পার্কের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে এ ঋণ সুবিধার নির্দেশনা দেয়া হয়। এর বাইরে রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, পিকনিক স্পট, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইডসহ পর্যটনের অনেক খাত, উপখাতকে পরিপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ কারণেই ঋণ দেয়নি ব্যাংকগুলো। পর্যটন কেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার পর বেশির ভাগ উদ্যোক্তা অর্থের অভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতনভাতা দিতে পারছেন না। যার কারণে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড গত কয়েক মাস ধরে এ বিষয়ে আবেদন নিবেদন ও দেনদরবার করছে। তাতে কোনো কাজ হয়নি। অথচ পর্যটন খাতের যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে তাতে এ খাতের উদ্যোক্তাদেরই সবার আগে ঋণ পাওয়া উচিত ছিল।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) বলছে, কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে গত বছর বাংলাদেশের পর্যটন খাতে জড়িত চার লাখের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পে ১৮ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। ২০২০ সালে কমে ১৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। এ সময় কর্মসংস্থান কমেছে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ছাড়াও বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, পর্যটন বন্ধ থাকায় এ খাতে লোকসান হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। চাকরি বাঁচানোর তাগিদে বিনা বেতনেও কাজ করেছেন হাজার হাজার কর্মচারী। ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিনিয়োগ করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। রিসোর্টের মালিকরা বলছেন, শুধু তাদেরই ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। সাড়ে তিন লাখ লোক প্রত্যক্ষভাবে এ কাজের সাথে জড়িত। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) জানায়, তাদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। ‘পর্যটন শিল্পের অর্থনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ভ্রমণ ও পর্যটন খাত ২০২০ সালে জিডিপিতে ৫৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা অবদান রেখেছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৮০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে লোকসান ২৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান কমেছে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ।
পর্যটন দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতের যতটা সম্ভাবনা আছে খুব সামান্যই এখন পর্যন্ত কাজে লাগানো গেছে। অবকাঠামো এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে অনেক পর্যটন এলাকা এখনো দেশী-বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে ব্যর্থ। আমাদের আশপাশের অনেক দেশ আছে যারা নিছক ধান ফলানোর প্রক্রিয়া তুলে ধরে ধানের ক্ষেত পর্যটনের আকর্ষণে পরিণত করেছে। সেখানে আমরা অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানকেও পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে পারিনি। এ ব্যর্থতার কোনো জবাব নেই।
সম্প্রতি শিল্প খাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনার ঋণ নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। যেসব প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা ও ব্যাংকারদের সাথে ভালো যোগাযোগ রয়েছে; তারাই ঋণসুবিধা পেয়েছেন। অনেকে এ সুবিধা নিয়ে নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। কেউ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। অথচ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন খাতের কেউ ঋণ পাচ্ছেন না। বৈষম্যের এটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এ পরিস্থিতির দ্রুত অবসান হওয়া দরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নিয়ে এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করবে এটাই কাম্য।


আরো সংবাদ



premium cement