২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নির্জন অমানবিক জীবন

কনডেম সেল নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে

-

অপরাধ ঘটার পর থেকে অপরাধীর শাস্তি কার্যকর হওয়া পর্যন্ত বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনোটি সেভাবে দাঁড়ায়নি। তার ওপর অনেক প্রতিষ্ঠান বিগত এক দশক ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। এর মধ্যে আমরা দেখতে পাই বিচারপ্রক্রিয়ার নানা ত্রুটিবিচ্যুতি অনেক মানুষের অধিকার খর্ব করছে। দেখা যাচ্ছে, অপরাধ না করেও কেউ কেউ শাস্তি ভোগ করছেন। আবার কেউ সামান্য অপরাধে বড় শাস্তি পাচ্ছেন। অন্য দিকে যারা বড় বড় অপরাধ করছেন তারা বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আসছেন না। তাদের আইনের আওতায় আনার তাগিদ বোধ করেন না কেউ। আবার বিচারের ক্ষেত্রেও অন্যায্যতার শিকার হন অনেকে। সহযোগী একটি দৈনিক খবর দিয়েছে, কনডেম সেলে কিভাবে ধুঁকছেন নাগরিকরা। এর মধ্যে কেউ কেউ আছেন যারা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো অপরাধ করেননি।
কনডেম সেল একটি বিশেষায়িত কারা ব্যবস্থা। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সেখানে রাখা হয়। ভয়ঙ্কর অপরাধীকে অন্য কয়েদিদের থেকে আলাদা রাখার জন্যই নির্জন কনডেম সেলের ধারণা এসেছে। যাতে সমাজে এই ধারণা চালু হয় জনসাধারণের বিরুদ্ধেÑ ভয়াবহ কোনো অপরাধ করলে কিংবা হত্যা করলে তাকে কারাগারেও এক ভয়াবহ পরিবেশে থাকতে হবে। এতে করে বড় অপরাধ সংঘটনে সমাজে ভীতি বিরাজ করে।
খবরে জানা যাচ্ছে, জাহিদ হোসেন নামে একজন ২০ বছর ধরে কনডেম সেলে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে স্ত্রী ও এক সন্তান হত্যার অভিযোগ। বাগেরহাটের আদালত ২০০০ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এ রায় অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়। চার বছর পর তার শুনানি হয় ও তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। ২০০৭ সালে তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করেন। এর পর থেকে ১৩ বছর সেটি পড়ে থাকে উচ্চ আদালতে। অবশেষে সেটি নজরে আসে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন একটি আপিল বেঞ্চের। নতুন করে শুরু হয় বিচারপ্রক্রিয়া। জাহিদের বিচারে নানা অসঙ্গতি আপিল বিভাগের সামনে তুলে ধরা হয়। তিনি খালাস পান; কিন্তু এরই মধ্যে দীর্ঘ দিন তিনি একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কনডেম সেলে কাটিয়েছেন।
দেশে ৬৮টি কারাগারের কনডেম সেলে দুই হাজার ১৫৩ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আছেন। এদের মধ্যে আরো অনেক জাহিদ থাকতে পারেন। আমরা দেখেছি, অপরাধ না করেও কেউ কেউ শাস্তি পেয়েছেন। অনেকে তাদের যৌবনের পুরোটাই হারিয়ে ফেলেছেন কারাগারে। যেমন একজন জাহালমকে শাস্তি খাটতে খাটতে জীবনের মূল্যবান অংশ হারিয়ে ফেলতে হয়েছে। পরে দেখা গেল, ভিন্ন লোকের অপরাধের দায় তার ওপর চাপানো হয়েছে।
কনডেম সেলের ব্যাপারটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, এখানে কেউ দীর্ঘ দিন থাকলে তার শারীরিক-মানসিক অবস্থার গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। দেখা যাচ্ছে, নিম্ন আদালতের রায়গুলো উচ্চ আদালতে চূড়ান্তভাবে যাচাই হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে তিনটি ধাপ রয়েছে। বিচারিক আদালত, উচ্চ আদালত ও সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এতটাই বেশি যে, নিরপরাধ যে কেউ এর ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাতে পারেন। গত বছর ৯৬৯টি ডেথ রেফারেন্স উচ্চ আদালতে আসে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১২৬টি। এভাবে প্রতি বছর দীর্ঘসূত্রতা আরো প্রলম্বিত হচ্ছে। বিচার শেষ হওয়ার সময়ের যেখানে নিশ্চয়তা নেই, সেখানে আসামিদের এভাবে কনডেম সেলে রাখার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। একজন ব্যক্তির বিচার যদি এভাবে প্রলম্বিত হয়ে যায় আর যদি তিনি শেষে নির্দোষ প্রমাণ হন, তাহলে কনেডম সেলের শাস্তির কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। আমরা আশা করব, বিচার প্রশাসন কনডেম সেলে আসামিকে রাখার নিয়মকানুন নিয়ে নতুন করে ভাববেন।


আরো সংবাদ



premium cement
পিরোজপুরে বাসের ধাক্কায় নদীতে ৪ মোটরসাইকেল ফরিদপুরে নিহতদের বাড়ি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী টিকটকে ভিডিও দেখে পুরস্কার, প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল