১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সোনারগাঁওয়ে অবৈধ বালু তোলা

কৃষিজমি বিলুপ্ত হচ্ছে কেন?

-

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার জামপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে ড্রেজিংয়ের নামে মাত্রাতিরিক্ত বালু অবৈধভাবে তোলার অভিযোগ এসেছে। নয়া দিগন্তের স্থানীয় সংবাদদাতার পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে জানানো হয়, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা বেশ কয়েক দিন ধরে বালু উত্তোলনের ফলে ৫০ জনেরও বেশি কৃষকের আবাদি জমি ভেঙে নদীতে চলে যাচ্ছে। কেউ এ অবৈধ কাজের প্রতিবাদ জানালে তাদের মারধর ছাড়াও জানে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়। তাই এলাকার লোকজন প্রশাসনিক দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক জরুরি উদ্যোগ আশা করছেন। অন্যথায়, কঠোর আন্দোলনে তারা অবতীর্ণ হতে পারেন।
জানা যায়, জামপুর ইউনিয়নের মুকিমপুর, ঝালুকান্দি ও গোবিন্দপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের দ্বারা অতিরিক্ত বালু নদী থেকে তোলায় কৃষিজমি ভাঙনের শিকার, বিশেষ করে বিগত সপ্তাহখানেক আওয়ামী লীগ নামধারী এক নেতা এবং তার দোসরদের নেতৃত্বে ১৮ জনের ‘সিন্ডিকেট’ প্রচুর বালু তুলছে ব্রহ্মপুত্র থেকে। তারা জামপুরের পাশাপাশি নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে নদীর তীর ঘেঁষে মাত্রাতিরিক্ত বালু তুলছে। কয়েক দিন ধরে রাত-দিন বালু তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক একর জমি, বেআইনি বালু তোলার পরিণামে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার মাদরাসা, ঈদগাহ, গোরস্তান প্রভৃতি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উল্লিখিত সিন্ডিকেট তাদের প্রতিবাদকারীদের মামলা ও হামলার হুমকি দিচ্ছে। ড্রেজার স্থাপনের সময় একজন স্কুলছাত্র এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তাই তাকে করা হলো মারধর। ফলে কৃষকরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
যারা ড্রেজিং করা দরকার বলে মনে করছেন, তারাও বলেছেন, অনুমতি আছে ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলনের; কিন্তু সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটটি ৬০-৬৫ ফুট গভীর করে বালু তোলায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, অবৈধভাবে বালু তুলছে যারা, তাদের মধ্যে আছে ভূমিদস্যু, মাদক কারবারি সন্ত্রাসী, বখাটে ও কিশোর গ্যাং। তাদের মধ্যে কয়েক মামলার আসামিও রয়েছে। এরা বালু তোলার সময় এলাকায় সন্ত্রাসী মহড়া দিয়ে থাকে বহিরাগতদের নিয়ে। তাদের মধ্যে অভিযুক্ত একজন অন্য একজনকে এ জন্য দোষারোপ করে নিজের দায় অস্বীকার করেছে।
সোনারগাঁও উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে পরিকল্পনাহীন পন্থায় বালু তুলে কাউকে কৃষকদের ক্ষতি করতে দেয়া যায় না। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের বৈঠকে আগেও আলোচনা করা হয়েছিল। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হবে।’ তার এসব কথা শুধু নয়, কথার বাস্তবায়নই জনসাধারণ দেখতে চায়, যাতে জমিজমা নদীতে চলে যাওয়ার মতো আত্মঘাতী কাজ কেউ না করে।
রাজধানীর অদূরবর্তী এই এলাকাসহ দেশের কোথাও বেআইনিভাবে যেন কেউ বালু তুলে জনজীবনে দুর্ভোগ ঘটাতে না পারে, তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এমনিতেই ভাঙনগ্রস্ত অসংখ্য মানুষের জীবনে হাহাকার উঠেছে।


আরো সংবাদ



premium cement