২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চূড়ান্ত তালিকা করতেই পাঁচ বছর

উপকারভোগী দরিদ্ররা বঞ্চিত

-

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিয়ে থাকে। এ জন্য বহু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, যাতে দরিদ্রদের জীবনযাত্রা সহজ হয় এবং কার্যত দারিদ্র্য হ্রাস পায়। এ কর্মসূচির মধ্যে একটি হলো ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ। কিন্তু সরকারি এ কর্মসূচিতে প্রকৃত দরিদ্রদের কতজন উপকৃত হচ্ছেন সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ কথা বলার কারণ হলো, এখন পর্যন্ত দেশে দরিদ্র মানুষের চূড়ান্ত এবং নির্ভুল একটি তালিকা প্রস্তুত করাই সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকৃত দরিদ্রদের প্রতিনিয়ত সুবিধাবঞ্চিত হতে হচ্ছে । এ বিষয়ে সহযোগী এক দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
করোনা মহামারীর আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ শতাংশ। করোনাকালে সরকারি হিসাবেই বেড়ে হয়েছে ২৫ শতাংশ। সে অনুযায়ী দেশে এখন দরিদ্র মানুষ প্রায় ৫ কোটি। কিন্তু এর পরও ১০ টাকা কেজিতে চাল দিতে মাত্র ৪৭ হাজার দরিদ্র পরিবার ‘খুঁজে পাচ্ছেন না’ সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের তালিকা পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত ওই তালিকায় নাম উঠেছে ৪৯ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৫ পরিবারের। পছন্দের ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করতে জনপ্রতিনিধিরা এ কাজে বিলম্ব করছেন, আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মাঠ প্রশাসন অতিরিক্ত সময় পার করছে। এতে করে সরকারের অনুমোদন থাকার পরও সুবিধাবঞ্চিত রয়েছে ২২৪ উপজেলার ৪৬ হাজার ৬১৫টি দরিদ্র পরিবার।
অথচ এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে এবং ইউপি চেয়ারম্যানের অধীনে কমিটি আছে। এসব কমিটি হতদরিদ্র পরিবারের তালিকা করে কার্ড দেয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সূত্র মতে, ২২৪ উপজেলার ৪৬ হাজার ৬১৫ উপকারভোগীকে ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালিকাভুক্ত করতে ১৯ আগস্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের চিঠি দিয়েছিল খাদ্য অধিদফতর। এ ধারাবাহিকতায় ইউপি চেয়ারম্যানদের চিঠি দেন ইউএনওরা। কিন্তু তালিকাভুক্তির কাজ বেশির ভাগ উপজেলায় শুরুই হয়নি। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এর পরও খাদ্য অধিদফতরে তালিকা পাঠানো হয়নি। এখন পুরো সেপ্টেম্বরজুড়ে এ কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে অধিদফতর।
বছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর- এই পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজিতে দরিদ্রদের চাল দেয়া হয়। তবে গত বছর করোনার শুরুতে যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে অনেকের নাম বাদ পড়ে। নীতিমালায় আছে, তালিকা থেকে কেউ বাদ গেলে সাথে সাথে নতুন ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করার কথা। এ দিকে দরিদ্রদের তালিকা করতে ‘ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ পভার্টি ডাটাবেজ’ নামে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন করা হয় ২০১৩ সালে। পরে প্রকল্পের নতুন নামকরণ হয় এনএইচডি-‘ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটা’। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে চার গুণ। তারপরও দেশে দরিদ্র মানুষের তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।
আমরা মনে করি, দেশে কার্যকরভাবে দারিদ্র্য হ্রাস করতে হলে সবার আগে সারা দেশে দরিদ্র মানুষের ইউনিয়নভিত্তিক নির্ভুল তালিকা তৈরি করতে হবে। এর পর সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কোনো কর্মসূচি চালু হলে তালিকা অনুযায়ী সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল তালিকা করলে প্রতি মুহূর্তে উপকারভোগীদের নাম সংযোজন-বিয়োজন করা সহজ হবে। তখন কোটি কোটি গরিব মানুষের দেশে সরকারি সুবিধার অনুমোদন থাকার পরও আর কেউ বঞ্চিত হবেন না। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে দরিদ্রদের তালিকা না থাকায় যখন কোনো কর্মসূচি শুরু হয় তখন দরিদ্র মানুষ খুঁজতে হয়। অনেক সময় একই ব্যক্তি একাধিক সুবিধা পায়। যারা পাওয়ার যোগ্য নয় তারাও সুবিধাভোগী হচ্ছেন। এতে করে প্রকৃত দরিদ্ররা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই দেশে দরিদ্র মানুষদের যাচাই বাছাই করতে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা আবশ্যক। সাথে সাথে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার, যাতে তারা দরিদ্র তালিকা করতে স্বচ্ছতার পরিচয় দেন।


আরো সংবাদ



premium cement