জনস্বার্থ উপেক্ষিত
- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০২:১৩
এমনটি মনে করার অবকাশ আছে যে, দেশে এখন লুটপাটের সংস্কৃতি চলছে। কেবল যে দুর্নীতির নানা কাহিনী গণমাধ্যমের বরাতে জনগণের গোচরে আসছে তাই নয়, রাষ্ট্রীয় নানা পদক্ষেপেও সেটি স্পষ্ট। নাগরিক সমাজ নানাভাবে সে কথা বলার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টারই প্রতিফলন ঘটেছে গত মঙ্গলবার কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের ভার্চুয়াল আলোচনায়।
আলোচনায় রাষ্ট্র কিভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গোষ্ঠীবিশেষকে দায়মুক্তি দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে তারই নমুনা হিসেবে উঠে এসেছে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য বিশেষ আইনের মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়ানোর বিষয়টি। বিশিষ্টজন বলছেন, দরপত্র ছাড়া কাজ দিয়ে কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই এই আইন। বলছেন, বছরের পর বছর এমন বিশেষ বিধান থাকার নজির কোথাও নেই।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশে এখন নানা পরিচয়ে লুণ্ঠনের সংস্কৃতি চলছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে একশ্রেণীর মানুষ অনৈতিক অন্যায় কর্মকাণ্ড বাধাহীনভাবে করে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ওই বিশেষ বিধানের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা স্বীকার করেন না। তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে দায়বদ্ধ।
চলতি মাসেই জাতীয় সংসদে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) বিল, ২০২১’ পাস হয়েছে। এর ফলে, আরো পাঁচ বছর ভাড়া বা দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল/কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে আইনি বাধা থাকছে না। লক্ষণীয় যে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এক নাজুক সময়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০১০ সালে সাময়িকভাবে এ বিশেষ বিধান করা হয়। সঙ্কটের তাৎক্ষণিক সমাধানে সাময়িকভাবে এ ধরনের বিধান গ্রহণযোগ্য; কিন্তু সঙ্কট দূর হয়ে যাওয়ার পরও যখন সেটি বছরের পর বছর কিংবা অনির্দিষ্টকাল অব্যাহত রাখা হয় তখন এর পেছনে অভিসন্ধি খোঁজা অস্বাভাবিক নয়। সেটিই হচ্ছে। ক্যাবের সভাপতি বলেছেন, গোষ্ঠীবিশেষকে দায়মুক্তি দেয়ার এ বিশেষ বিধানকে কালাকানুন বলা যায়। তিনি বলেন, সরবরাহ বাড়ানোর নামে অপশাসনের দিকে যাচ্ছে সরকারি সংস্থা।
আলোচনায় দেশে বিদ্যমান লুটপাটের সংস্কৃতির আরো কিছু প্রসঙ্গ উঠে আসে। বলা হয়েছে, ভারতে যেখানে এক কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে এক কোটি টকা ব্যয় হয়, সেখানে বাংলাদেশে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম এই তথ্য দেন। এর পাশাপাশি আমাদের জানা, এক কিলোমিটার সড়ক অথবা সড়ক সেতু নির্মাণে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় হয়। শুধু তা-ই নয়, গত এক যুগে দেশে একটি বা দু’টি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো উন্নয়ন প্র্রকল্পই প্রাক্কলিত ব্যয় ও মেয়াদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ বাড়তি প্রকল্প ব্যয় অযৌক্তিক এবং অর্থের নয়ছয় করার উদ্দেশ্যেই করা হয়।
একই অবস্থা চলছে রাষ্ট্রীয় সর্বস্তরের কেনাকাটায়। রূপপুরের বালিশকাণ্ড এরই মধ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় অবিশ্বাস্য বাড়তি ব্যয় রেকর্ড হয়ে আছে। ব্যাংকের দুর্নীতি, তহবিল তছরুপ স্মরণীয়। অথচ বেশির ভাগ দুর্নীতির ঘটনাই ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। কোনো একটি বিষয়েও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে এমন নজির নেই। যেন দেশে যার যেভাবে সম্ভব তাকে সেভাবেই অর্থ হাতিয়ে নেয়ার একটি অলিখিত ও অঘোষিত অনুমতি দিয়ে দেয়া হয়েছে। নীতি-নৈতিকতা বলে যে কিছু কখনো এ দেশে ছিল সেই বোধটাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটিই উপায়Ñ জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ও প্রতিবাদ; কিন্তু সেটি সম্ভব করে তোলার মতো যোগ্য নেতৃত্ব কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা