১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা-প্রাণহানি

ক্ষমতার অংশীজন হতে এত মরিয়া

-

সংঘর্ষ, গোলাগুলি, মৃত্যু আর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে গত সোমবার শেষ হলো প্রথম ধাপের স্থগিত হওয়া ১৬০টি ইউনিয়নের (ইউপি) নির্বাচন। প্রথম ধাপে মোট ৩৭১টি ইউপিতে ভোট গ্রহণের কথা ছিল গত এপ্রিলে। করোনা সংক্রমণের কারণে তখন ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে ২১ জুন ২০৪টি ইউপিতে ভোট নেয়া হয়। কিন্তু যেসব এলাকায় সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল না সেখানকার ইউপিগুলোতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। ২০ সেপ্টেম্বরের ভোটের দিন নির্বাচনী সহিংসতায় কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় দু’জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে জোর করে ব্যালটে সিল মারা, ব্যালট ছিনতাই এবং প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর ২১ জুনের নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন তিনজন। এতে করে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচজনে।
স্থানীয় সরকারের সর্বনি¤œ স্তর ইউনিয়ন পরিষদে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি অংশ না নেয়ায় শুধু সরকারি দলের প্রার্থীরা যারা ‘জনপ্রতিনিধি’ হওয়ার প্রত্যাশী তারাই নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। ফলে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এতে অংশ নিচ্ছে না। প্রথম ধাপের ৩৭১টি ইউপির মধ্যে ৬৯টিতেই চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিপরীতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটের প্রয়োজন হয়নি। বিএনপি ভোটে না থাকলেও বিভিন্ন ইউপিতে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় সঙ্ঘাত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
প্রশ্ন হলোÑবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভোটে অংশ না নেয়ায়, একতরফা এই নির্বাচনেও কেন রক্তক্ষরণ ও প্রাণহানি? এর পেছনের মনস্তত্ত্ব হলোÑ ক্ষমতার অংশীজন হলেই যেকোনো উপায়ে অঢেল অর্থ-সম্পদের অধিকারী হওয়া যায়। ফলে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের আয়োজন করেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন, তিনিই জনপ্রতিনিধি হওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি যার কারণে তারা বেপরোয়া। এতে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার প্রদর্শনী হয়। জনসাধারণেরও নির্বিঘেœ ভোট দেয়ার সুযোগ থাকে না। দেখা যাচ্ছে, যারা শক্তি প্রদর্শনে জয়ী, তারাই নির্বাচিত হচ্ছেন। অবশ্য সরকারের পছন্দের প্রার্থীই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন। তার ধারাবাহিকতায় সোমবারে ১৬০টি ইউনিয়নের মধ্যে সব ক’টির চেয়ারম্যান ও মেম্বার দিন শেষে সরকারের পছন্দেই নির্বাচিত হয়েছেন। সংসদের শূন্য আসনগুলোর ভোট গ্রহণও অর্থহীন হয়ে পড়ছে। শূন্য আসনের উপনির্বাচনও একইভাবে হচ্ছে। সর্বশেষ কুমিল্লা-৭ আসনে সরকারদলীয় প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ইউপির ভোটে সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনাই বলে দেয় দেশে নির্বাচনীব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। বাস্তবে নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ গৌণ হয়ে বরং স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলের মতো পেশিশক্তির উত্থান ঘটছে। ভোটারদের ভোটাধিকার চর্চার সুযোগ দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে এখন শূন্যের কোঠায়। এর পরও নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বিকার। এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, বর্তমান ইসি নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছে।
নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং ভোটারদের অনাগ্রহের কারণ, ইসির সম্পূর্ণ অকার্যকারিতা। ভোট গ্রহণ নির্বিঘেœ করতে ইসিকে সংবিধান কর্তৃত্ব অর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন সংস্থাটি ক্ষমতা প্রয়োগে অনিচ্ছুক বলেই মনে হয়; ক্ষমতা প্রয়োগের চেয়ে সরকারের আজ্ঞাবহ থাকাই বেশি পছন্দনীয়। এক দশক ধরে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আজকের এই পর্যায়ে আনা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য দরকার একটি টেকসই সিস্টেম; কিন্তু সরকার ও ইসির পক্ষ থেকে অবাধ এবং নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের কার্যকর পদ্ধতি গড়তে আপাতত কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল