২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আলুর বস্তাপ্রতি লোকসান ৫১৫ টাকা

অবস্থা যেন ‘আলুভর্তা’

-

দেশের যশোরসহ কোনো কোনো অঞ্চলে অনুকূল আবহাওয়াতে এবার ফলন ভালো হয়েছিল আলুর; তা ছাড়া গত মৌসুমে শেষ পর্যন্ত চাষিরা এর ভালোই দাম পেয়েছেন। ফলে অনেক কৃষক আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং তারা অন্যান্য চাষবাস বাদ দিয়ে আলুই বেশি আবাদ করেছেন। কিন্তু এখন দাম পড়ে যাওয়ায় যশোরের চৌগাছার মতো কোনো কোনো এলাকায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। কোল্ড স্টোরেজে বেশি দামের আশায় সংরক্ষণ করা আলুর প্রতি বস্তায় লোকসান দিতে হচ্ছে ৫১৫ টাকা। অথচ আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করে বিপণন করার জন্য এক বস্তার ৫০ কেজি আলুর পেছনে খরচের পরিমাণ ১১৬৫ টাকা। কিন্তু সে আলুর দাম বর্তমানে বাজারে ৬৫০ টাকা। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট কৃষক ও বিক্রেতাদের অবস্থা এত বেহাল যে, অনেকে বলছেন তারা নিজেরাই এখন ‘আলুভর্তা’। এতে ঠকছেন মূলত গরিব চাষিরা যারা তৃণমূল পর্যায়ের আলু উৎপাদনকারী।
নয়া দিগন্তের যশোরের চৌগাছা সংবাদদাতা এক প্রতিবেদনে আলুচাষিদের দুর্ভোগ তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের সূত্রে বলেছেন, চৌগাছায় বিগত মৌসুমে আলু চাষ করা হয় ৩৯৫ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭০ হেক্টর বেশি। তদুপরি, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে আলুর। শুরুতে আলুর দাম কম থাকায় অধিক লাভের প্রত্যাশায় অনেকে বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করেছেন। উৎপাদন, স্টোরেজের ভাড়া, মজুর বাবদ ব্যয় প্রভৃতিসহ এক কেজি আলুর দাম ১৯-২০ টাকা পড়ে বলে দাবি করা হয়েছে; কিন্তু বাজারে এর দাম বড় জোর ১৩ টাকা করে। ফলে লোকসানের ভয়ে আলু বাজারে বেচতে অনেকেই আগ্রহী নন। এতে আলুর কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপর দিকে কয়েকজন আলুচাষি জানিয়েছেন, এক বস্তা আলুর জন্য কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া করা হলে খরচ করতে হয় এক হাজার ১৬৫ টাকা, তবে এখন লোকসান দিতে হচ্ছে ৫১৫ টাকা করে।
স্থানীয় একটি কোল্ড স্টোরেজের কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি মৌসুমে তাদের এখানে উপজেলার চাষি ও ব্যবসায়ীরা এক লাখ ১৬ হাজার ৭২২ বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছেন। ভাড়া পুরো শোধ করে দিয়ে ৩০ নভেম্বরের আগে তা তুলে নিতে হবে। কিন্তু বাজারে আলুর দাম কম বলে মাত্র ৩০ হাজার ৩১৮ বস্তা আলু উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ বাকি আছে মাত্র দুই মাস। গত সপ্তাহে গিয়ে দেখা গেছে, আলু বাছাই কাজের নারী শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছেন। তারা জানান, ‘স্টোরেজের আলু না তোলায় কয়েক শ’ শ্রমিকের হাতে কাজ নেই।’ এমনিতেই চলছে মহামারী কোভিডের তাণ্ডব; তার ওপর কাজ হারিয়ে তাদের পরিবারগুলো চরম ভোগান্তির শিকার। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আলু কিনেছিলেন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। এর সাথে আছে পরিবহন ব্যয়।
আসলে কৃষিপণ্যের এ সমস্যা বহু দেশেই আছে। তাই কৃষক যাতে তার পণ্যের উৎপাদন ব্যয় পুষিয়ে মুনাফা করতে পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার তাদের পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদান করে থাকে প্রণোদনা হিসেবে। অপর দিকে বাংলাদেশের মতো দুর্নীতিদুষ্ট ও অনিয়মকবলিত রাষ্ট্রে মহামারীকালীন বিশেষ প্রণোদনার অর্থ নিয়েও বড় ধরনের ঘাপলা করা হয়েছে।
কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য বাজারে এমনভাবে নিশ্চিত করা দরকার, যাতে সাধারণ ভোক্তা, সংশ্লিষ্ট চাষি ও ব্যবসায়ী বা বিক্রেতাÑ কেউ বঞ্চিত না হন। তাই সবার স্বার্থের সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত। অন্যথায় সাধারণ ক্রেতা ও উৎপাদক তথা কৃষকরা হবেন ক্ষতির শিকার।

 


আরো সংবাদ



premium cement