২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা বিপুল

জরুরি ব্যবস্থা নেয়া দরকার

-

বৈশ্বিক মহামারী মানুষের জীবনের প্রতিটি খাতে নানাভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। বলা হচ্ছে, সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে অর্থনৈতিক খাতে। ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পদে পদে ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু এসব ক্ষতি ধীরে হলেও একসময় হয়তো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটি হলোÑ বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষাজীবনের। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই ক্ষতি সর্বোচ্চ। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা হয়েছে গত ১২ সেপ্টেম্বর। দীর্ঘ ১৮ মাসের এ ব্যবধান শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাসই কেবল হরণ করেনি, অনেকের জীবন থেকে শিক্ষার সুযোগটাই চিরতরে কেড়ে নিয়েছে।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, সারা দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী এখন আর স্কুলে আসছে না। এদের বড় অংশ ঝরে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুল খোলার পর গত এক সপ্তাহে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেনি। রিপোর্টে মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিইপি) তথ্যের উল্লেখ করে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী এখনো অনুপস্থিত। সংখ্যার হিসাবে সেটি ৪৮ লাখেরও বেশি। পরিবারের আর্থিক সঙ্কট, আয়-রোজগার কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের বিদ্যালয়ে ফেরানো কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে এমন খবর এসেছে অনেক মিডিয়ায়। অনেক গরিব শিক্ষার্থী পরিবারের জন্য আয়-রোজগারে বাধ্য হয়েছে। তবে বহু অভিভাবক এখনো করোনার ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। পরিস্থিতি আরো একটু স্বাভাবিক হলেই সব শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরবে এমন বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব হালকা করার প্রয়াস পাচ্ছেন দায়িত্বশীলরা।
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। মোট শিক্ষার্থী চার কোটি ২৭ লাখের বেশি। এর মধ্যে ২০ শতাংশ বা ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এটিকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। স্কুল দীর্ঘকাল বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা স্কুলবিমুখ হবে এবং শিক্ষার প্রতি তাদের অনীহা বাড়বে এটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তার সাথে মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার বাড়বে এটিও অবধারিত। আমরা জানি, বাল্যবিয়ের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এক হিসাবে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাল্যবিয়ের হার বৃদ্ধি পায় ২২০ শতাংশ পর্যন্ত। পরের এক বছরে এই প্রবণতা বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু কোনো পরিসংখ্যান কোথাও পাওয়া যায়নি। এখন স্কুল খোলার পর দেখা যাচ্ছে, গ্রামের অনেক স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই বিয়ে হয়ে গেছে।
স্কুল খোলার প্রথম সপ্তাহে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রকৃত চিত্র হয়তো স্পষ্ট হবে না। তবে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় অনেক অভিভাবক হয়তো সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না, এটি হতে পারে। তার পরও বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে আমলে নেয়া উচিত। কারণ অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার বা পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। শিক্ষার ক্ষতি কখনো পুষিয়ে নেয়া যায় না। যে শিক্ষার্থী আজ লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে তার মেধা, যোগ্যতা জাতির তেমন কাজে লাগবে না। তাই এ বিষয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমরা ক্ষমতাসীনদের মধ্যে শিক্ষার বিষয়ে খুব একটা উৎসাহ দেখি না, এটাই জাতির জন্য দুশ্চিন্তার। তারা বিদ্যোৎসাহী হলে করোনার কারণে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা দেশের তালিকার বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে থাকত না। কারণ অনেক দেশেই করোনার আক্রমণ বাংলাদেশের চেয়ে মারাত্মক ছিল। তারা শীর্ষস্থান দখল করেনি।


আরো সংবাদ



premium cement