২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাঁধে ভাঙন মেরামত করা হয়নি

আশাশুনি তবুও আছে আশা করে

-

সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারে বিকল্প বাঁধও ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হয়েছে এ জেলার আশাশুনি উপজেলার পাঁচটি গ্রাম। বাঁধের সংস্কার না করায় বসতভিটা বিলীন হয়ে গেলেও এবং কয়েক হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ সত্ত্বেও, তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন রিংবাঁধটির মেরামতের বিষয়ে। নয়া দিগন্তের সাতক্ষীরা সংবাদদাতার পাঠানো এবং গত ১৬ সেপ্টেম্বর ছাপানো এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে। সাথে প্রকাশিত চিত্রে দেখানো হয়েছে জোয়ারে প্লাবিত প্রতাপনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নদীর প্রবল জোয়ারের তাণ্ডবে বিকল্প রিংবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের পাঁচ গ্রাম। তাই লোনা পানিতে থইথই করছে গোটা জনপদ। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল স্রোতের তোড়ে চোখের সামনেই তলিয়ে যাচ্ছে আবাসগৃহসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এতে সর্বশেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে, পৈতৃক ভিটা ছেড়ে অজানার লক্ষ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে অনেক অসহায় পরিবার।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সুন্দরবন ঘেঁষে এবং বঙ্গোপসাগরের অদূরে অবস্থিত, সাতক্ষীরা জেলার বিরাট এলাকায় গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই এ বছর আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর জুমাবার খোলপেটুয়া নদীর প্রচণ্ড জোয়ারের তোড়ে, প্রতাপনগর গ্রামের একটি মসজিদের পাশের বিকল্প রিংবাঁধ ভেঙে আবার প্লাবিত হয়েছে প্রতাপনগর, তালতলা, মাদারবাড়িয়া, কুড়িকাহনিয়া ও কল্যাণপুরÑ এই পাঁচটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। দিনে ও রাতে নিয়মিত জোয়ারের পানিতে এখন অসহায়ের মতো ভাসছেন এসব গাঁয়ের বাসিন্দারা। ভাটার সময়ে পানি ঠিকই নামছে; তবে সবকিছু ভেঙে নিয়ে। খোলপেটুয়ার লোনা পানিতে ছেলেকে হারিয়েছেন প্রতাপনগরের কালাম ঘরামী। সর্বহারা মানুষটির জানা নেই পরিজনসহ কোথায় যাবেন; কিভাবে বেঁচে থাকবেন। তিনি আফসোসের সাথে বলেন, ‘কয়েক পুরুষ ধরে এখানে বসবাস করছিলাম, এবার বাঁধের ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে যাবার গন্তব্য অজানা।’ তার মতো বহু পরিবার সব খুইয়ে বাপ-দাদার এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।
জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে জোয়ারের ধাক্কায় প্রতাপনগরে রিংবাঁধ শুরুতে অল্প ভাঙলেও পরে তা মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। প্রবল জোয়ারে দীর্ঘস্থানজুড়ে বাঁধটি ভেঙে যায়। ফলে পাঁচটি গ্রাম এখন প্লাবনের মর্মান্তিক শিকার। তদুপরি, স্থানীয় ইউপি থেকে উপজেলামুখী প্রধান সড়কের চলমান সংস্কারকাজ এতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন একটি মসজিদও ভাঙনের মুখে। কয়েক পরিবার ভিটামাটিও হারিয়েছে। এখনো বাঁধটি মেরামত করা হয়নি। অথচ জোয়ার ও ভাটা চলছেই। পাঁচ গ্রামের প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষের দুর্ভোগ তাই চরমে।
স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেছেন, ঝড়ে এক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলেও সংস্কার করা যায়নি। তাই গ্রামবাসী প্রতাপনগরে বিকল্প বাঁধ বানিয়েছে। খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারে ৯ সেপ্টেম্বর তা ভেঙে গেলে লোকজন সেটি দ্রুত মেরামত করে ফেলে। তবে পরদিনই প্রতাপনগরে একটি মসজিদের কাছে বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে প্রায় শ’ ফুট রাস্তা ভেঙে এলাকার পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়। এর মধ্যে দু’গ্রামের কয়েক শ’ বিঘা মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে কয়েক শ’ পরিবারের ঘরবাড়ি। তাই অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। প্রশাসন ও পাউবোকে জানালেও বাঁধ জরুরি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।
এসব এলাকার দুর্ভোগরোধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।


আরো সংবাদ



premium cement