শহরাঞ্চলেও বাড়াতে হবে
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০৫
করোনা মহামারীর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে এত তীব্রভাবে পড়েছে যে, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গরিব মানুষেরা আছেন বেকায়দায়; বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এদের মধ্যে যারা শহরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের অবস্থা শোচনীয়। আগে যেখানে দেশে দুই কোটি ৪২ লাখ হতদরিদ্র্য ছিল; সেখানে নতুন করে আরো প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। সংবিধানের ১৫-এ ধারায় উল্লেখ আছে ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন’।
দরিদ্র মানুষের সহায়তার একটি অন্যতম উপকরণ হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি। কিন্তু গ্রাম এবং শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প সমভাবে গ্রহণ করা হয় না। আরো লক্ষণীয় যে, সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় যেসব পরিবারকে অর্থসহায়তা দেয়া হয় সেখানে গবেষণা না করে কর্মসূচি নেয়া হয়। ফলে অনেক প্রকল্প শুরুতেই হোঁচট খায়। এজন্য যেকোনো সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) যদি হয়ে যায়, তাহলে যে কেউ এ সুবিধা পাবে। একই সাথে সব উপকারভোগীর তথ্যসমৃদ্ধ একটি একীভূত কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় কারা ভাতা পাচ্ছেন, তা নির্ধারণ করা আবশ্যক।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো মূলত গ্রামাঞ্চলকেন্দ্রিক। অথচ শহরাঞ্চলের জনসংখ্যার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে। আর অর্ধেক পরিবার (৫০ শতাংশ) দরিদ্র্র হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে গ্রাম এবং শহর এলাকার মধ্যে ভৌগোলিক বরাদ্দ পুনর্বিন্যাস করা দরকার। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে শহরে ১৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে থাকলেও তাদের ১১ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় রয়েছে। অন্য দিকে গ্রামাঞ্চলে ২৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে থাকলেও সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আছে ৩৬ শতাংশ মানুষ। গ্রামে দারিদ্র্য হারের চেয়ে বেশি মানুষ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবারই সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় এসেছে।
গত কয়েক দশক ধরে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়েছে সরকার। চলমান মহামারী দেশে আরো জোরালো, দক্ষ ও অভিযোজিত সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। দেশে প্রতি আটজন দরিদ্র ব্যক্তির মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এর পরেও, দরিদ্র শিশুরা সামাজিক সুরক্ষা ব্যয়ের মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ পায়। শিশুদের ওপর বিনিয়োগ করা হলে তা তাদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে এবং প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে আরো উৎপাদনশীল হতে সাহায্য করে। এভাবে প্রজন্ম ধরে দারিদ্র্যের চক্র ভেঙে দেয়া সম্ভব। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই কর্মসূচি নিতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ আরো কার্যকর হবে, যদি বরাদ্দগুলো বিভিন্ন স্তরের দরিদ্রদের মাঝে ভাগ করে দেয়া যায়। আর সেভাবেই কর্মসূচিগুলো হাতে নিতে হবে।
সুবিধাভোগীরা যাতে সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা দ্রুত পায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেশে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব। কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা যথাযথভাবে গ্রহণ করা হলে এবং তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে দেশে দারিদ্র্যের হার ৩৬ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। একটি স্বচ্ছ জরিপ করে ‘ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটাবেস’ তৈরির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রকৃত উপকারভোগীর তালিকা করা যেতে পারে। আধুনিকায়ন সামাজিক সুরক্ষার উপাদান ও সেবাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। প্রযুক্তির সাহায্যে এটা খুব সহজে করা যায়। সুবিধাভোগীর কাছে ভাতা সঠিক সময়ে পৌঁছানোও নিশ্চিত করা যায়। ভাতা প্রদানের পদ্ধতি সম্পূর্ণ আধুনিক করলে সুবিধাভোগীর সময় ও খরচের পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে সঠিক সময়ে সঠিক সুবিধাভোগীর কাছে ভাতা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে সরকারি, বেসরকারি ও অন্যান্য সেবা সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা