২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পিরোজপুরের আমড়াচাষিরা অসন্তুষ্ট

বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কেন

-

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলায় এবার আমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্য দিকে পুষ্টিকর ও ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ আমড়ার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমড়ার মৌসুম এলে হাটবাজার ছাড়াও রাস্তাঘাটে, এখানে-সেখানে এটি প্রচুর বিক্রি হয়। বিশেষত মহামারী কোভিডের এই সময়ে আমড়ার চাহিদা ব্যাপক। কারণ আমড়া দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তার ওপর অর্থনৈতিক গুরুত্বের ক্ষেত্রেও আমড়া উল্লেøখযোগ্য। অর্থকরী ফল হিসেবে আমড়ার উৎপাদন ও বিপণন বেড়ে গেছে। এসব সত্ত্বেও কাউখালীর আমড়া উৎপাদনকারীদের উদ্বেগের অন্ত নেই। নয়া দিগন্তের এক সচিত্র প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছেন পত্রিকাটির স্থানীয় সংবাদদাতা। তিনি জানান, ফলন বেশি হওয়ায় আমড়ার দাম তুলনামূলকভাবে কম এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপের দরুন সংশ্লিষ্ট চাষিরা আমড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে তারা মুনাফার একটি বড় অংশ থেকেই বঞ্চিত থেকে যান।
জানা গেছে, কাউখালীতে গত তিন বছরের চেয়ে এবার আমড়ার ফলন বা উৎপাদন অধিক। তবে এর দাম কমে যাওয়ায় আমড়া চাষে সম্পৃক্তরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। উল্লেøখ্য, আমড়া চাষ দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতেই বেশি হয়। বিশেষ করে পিরোজপুর জেলার কাউখালী, স্বরূপকাঠি ও নাজিরপুর উপজেলায় এই ফলের আবাদ ও ফলন বেশি। এসব এলাকায় সাধারণত এমন কোনো বাড়ি দেখা যায় না যেখানে অন্তত একটিও আমড়াগাছ নেই। কেবল উঠানে নয়, রাস্তার ধারে আমড়ার চারা লাগানো যেন অনেকের একপ্রকার ‘নেশা’। বহু লোক পতিত জমিতে, কেউবা আবাদি জমিতে বড় আমড়াবাগান তৈরি করেছেন। কোনো কোনো চাষি আমড়া বিক্রি করে বছরে কয়েক লাখ টাকা পেয়ে থাকেন।
গ্রামে গ্রামে এমন ‘বেপারি’ রয়েছেন যাদের কাজ আমড়া বেচাকেনা করা। তারা ফাল্গুন-চৈত্র মাসেই গাছের কুঁড়ি দেখে আগাম অর্থ দিয়ে আমড়ার বাগান ক্রয় করে ফেলেন। এই আমড়া পরিপক্ব হিসেবে বাজারে মেলে কয়েক মাস পরে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে। অনেকে এর ভরা মৌসুমে নিজেরাই আমড়া বিক্রি করেন। সাধারণত প্রতি বছর শ্রাবণ মাস থেকে শুরু করে কার্তিক পর্যন্ত কয়েক মাস পর্যায়ক্রমে গাছ থেকে কাঁচা আমড়া সংগ্রহ করা হয়। কাউখালীতে এর বিকিকিনির বৃহত্তম মোকাম বা ব্যবসাকেন্দ্র অবস্থিত। মোকামে আমড়া বিক্রির পর তা লঞ্চে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় পাঠানো হয়ে থাকে। পিরোজপুর জেলার আমড়া আকারে বড় এবং স্বাদে ভালো বলে বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদা বেশি। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার পরিমাণ অধিক বলে আমড়া উৎপাদক গৃহস্থরা এখন আর্থিক বঞ্চনার শিকার। কাউখালী উপজেলা কৃষি বিভাগ বলেছে, ‘এ বছর আমড়ার ফলন ১৫ শতাংশের মতো বেশি বলে দাম কিছুটা কম।’
আমড়ার আবাদ ও উৎপাদন বেশি হলে এর দাম পড়ে যাবেÑ এটি কোনো যুক্তির কথা নয়। তদুপরি, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের লাগাম টানা উচিত। চাষি যদি কোনো কারণে আমড়া চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তাহলে বাজারে এটি কমই পাওয়া যাবে। কথা হলো, উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থের যথাযথ সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
তাই আমড়া উৎপাদনকারীদের ‘হাসি যাতে অম্লান থাকে’ তা নিশ্চিত করা দরকার। প্রয়োজনে সরকার ভর্তুকি দিয়ে হলেও আমড়ার ন্যায্যমূল্য এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে এটি রাখার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। তা হলে চাষিরা ঠকবেন না এবং সাধারণ মানুষ আমড়া কিনে খেতে পারবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement