২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফেরত আসা প্রবাসীদের কর্মসংস্থানে প্রকল্প

তাদের কল্যাণে করার আছে অনেক

-

করোনাকালীন বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন। আমাদের অর্থনীতি তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকার বড় কারণ বর্ধিতহারে তাদের অর্থ প্রেরণ। সম্প্রতি সরকার ঘোষিত, প্রবাসী অর্থদাতাদের ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এ ক্ষেত্রে তাদের আরো উৎসাহ দিয়েছে। সময়মতো সরকারের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। ৪২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার এ প্রকল্প থেকে তাদের নগদ সহায়তা দেয়া হবে। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতদিন প্রবাসীরা দিয়েছেন, এবার আমরা তাদের দেবো।’ এ মানসিকতাকে আমরা স্বাগত জানাই। উল্লেখ্য, এক কোটির বেশি প্রবাসী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন। এতে তারাও খুশি হবেন। এর সাথে আমরা মনে করি, প্রবাসীদের অধিকার নিয়ে আরো অনেক কিছু করার আছে সরকারের।
সাধারণত প্রবাসীদের ব্যাপারে অনেক সময়ই আমরা সঠিক নীতি নিতে পারি না। তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করা হয়। বিমানবন্দরে তাদের প্রতি খারাপ ব্যবহারের দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে। তাদের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয় যাতে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শিত হয় না। মনে হয় তারা অযোগ্য অশিক্ষিত এবং কোনো গুণ না থাকার কারণে তারা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আমাদের বিমানবন্দরগুলো প্রতিদিন এমন আচরণের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। তার চেয়ে বড় অভিযোগ রয়েছে আমাদের দূতাবাসগুলোর বিরুদ্ধে। আর তা হচ্ছেÑ তারা প্রবাসীদের উপযুক্ত সেবা দেন না। এমনকি দূতাবাসের কর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে অপরাধও করছেন। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ যেসব দেশে বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী রয়েছেন সেখানে এমনটি অহরহ ঘটছে। কাতারে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অন্যায় আচরণের বিষয় আলোচিত হচ্ছে। এর ফলে ওই ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
মোহাম্মদ আলী নামে ফেনীর ওই বাসিন্দা তার সব কিছু হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। একটি জনপ্রিয় টকশোতে এসে তার বিরুদ্ধে অপরাধের বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। জানা যায়, কাতার দূতাবাসের যোগসাজশে তার ব্যবসার প্রায় পুরো পুঁজি হাতিয়ে নিয়েছে কিছু লোক। ওই ব্যবসায়ী ২০০ বাংলাদেশীকে কর্মে নিয়োজিত করে ছিলেন যারা কাজ হারিয়েছেন। দূতাবাস তার ও পরিবারের পাসপোর্ট জব্দ করেছে। এখন তিনি অনেকটাই বন্দী অবস্থায় কাতারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে কাতারের আদালতে যেসব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল, তিনি তা থেকে খালাস পেয়েছেন। অন্য দিকে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতও তার পক্ষে রায় দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করা হচ্ছে না। আমরা এই ঘটনাটির উল্লেখ করলেও এ ধরনের আরো কিছু বড় অভিযোগ উঠেছে এর আগে থেকেই। ওইসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দূতাবাসের যোগসাজশে ঘটা অপরাধের কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। দেশ-বিদেশে মিলিয়ে একটা শক্তিশালী অপরাধী সিন্ডিকেট কাজ করছে যারা কোনো ধরনের আইনকানুনের তোয়াক্কা করছে না। এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের কারণে শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বাংলাদেশের সুনামও ক্ষুণœ হচ্ছে।
প্রবাসীদের নিয়ে সরকারের ইতিবাচক পরিকল্পনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাস্তবে এ ক্ষেত্রে আলোর মুখ দেখতে হলে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রথমত, প্রবাসীদের ব্যাপারে সম্মানজনক মনোভাব পোষণ করতে হবে। তারা যেন বিমানবন্দর, দূতাবাস ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত আচরণ পান তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য আমাদের দূতাবাসগুলোকে অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে। এর পাশাপাশি যারা প্রবাসীদের হয়রানি করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। দূতাবাসগুলোতে যারা কাজ করতে যান, তাদের মানসিকতায় যাতে প্রবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগে সে জন্য দরকার হলে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আরেকটি বিষয় প্রায় সময়ে আমরা লক্ষ করছিÑ ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে অবৈধ পথে অভিবাসী হতে গিয়ে হয়রানির অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। তাদের অনেকে নানাভাবে পথে প্রাণও হারাচ্ছেন। দালালদের মাধ্যমে এভাবে বিপদসঙ্কুল পথে বিদেশযাত্রা বন্ধ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement