এ বঞ্চনার শেষ কবে?
- ৩০ জুলাই ২০২১, ০১:৩৯
কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোটের ২০ শয্যাবিশিষ্ট, গোহারুয়া হাসপাতাল দীর্ঘ ১৫ বছর পার হলেও পুরোপুরি চালু করা হয়নি। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন দুই জেলার চারটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসপাতালটির সংযোগ সড়ক রয়েছে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ এবং নোয়াখালীর দুই উপজেলা সেনবাগ আর সোনাইমুড়ীর সাথে। তাছাড়া কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার অংশবিশেষের মানুষও এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ বছর আগে নির্মিত এই হাসপাতালের ছয়টি বিল্ডিং এখন যেন ‘ভূতের বাড়ি’। এর অনেক অবকাঠামোই নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতাল অঙ্গনে চলছে গরু ছাগল। এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ২০০৪ সালের ১৫ এপ্রিল আর উদ্বোধন হয় ২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবর। হাসপাতালের মূল ভবনের সাথে আছে তিনটি দোতলা আর দুটি একতলা ভবন। কিন্তু কোনো একজন চিকিৎসককেও পদায়ন না করায় শুরুতেই হাসপাতালটি ‘প্রচণ্ড ধাক্কা খায়’। এলাকার মানুষ মরিয়া হয়ে দাবি জানাতে থাকেন এর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর জন্য। কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল চালু এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করার জন্য ২০১৪ সালে পত্র পাঠান সংশ্লিষ্ট সচিব বরাবর। সে বছর তৈরি করা হলো এখানকার ছয়জন করে চিকিৎসক ও নার্সের পদ। তবে মাত্র একজন ডাক্তার নিয়োগ পান এই হাসপাতালে, যিনি সে বছরই এখান থেকে বিদায় নেন। এরপর দু’জন মহিলাসহ চারজন ডাক্তার এখানে দায়িত্ব পেয়েও কার্যত আসেননি। কেউ চলে যান প্রেষণে; কেউবা অধিকাংশ সময় উপজেলা হাসপাতালে কাজ করেছেন। অবশেষে ২০১৬-তে দু’জন নার্সের পদায়ন সত্ত্বেও ডাক্তার ছাড়া তারা কাজ করতে পারেননি। পরের বছর স্থানীয় সংসদ সদস্য, পরিকল্পনামন্ত্রী (এখন অর্থমন্ত্রী), স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক হাসপাতাল পরিদর্শন করে এটি পুরো চালু করার আশ্বাস দেন। পরে সিভিল সার্জনের অফিস চাহিদাপত্র পাঠায়। তবে ২০১৭ সালে ১৮ জনের বদলে ১৩ জনের পদ সৃজন করা হয় এখানে। সবশেষ, মাত্র বছরখানেক আগে পাঁচজনকে পদায়ন করা হলে তারা আউটডোর সেবা দিতে থাকেন। তবে ইনডোর চিকিৎসাসেবার জন্য একটি বেডও নেই এই হাসপাতালে।
অপর দিকে দেখা গেছে, হাসপাতালের অনেক ভবন বেদখল হয়ে গেছে এবং সেখানে পশুপাখির খামার স্থাপন করা হয়েছে; আরো রাখা হয়েছে জ্বালানি কাঠ। গোটা এলাকা ঝোপজঙ্গলে পরিপূর্ণ। সুইচ মিটার বিনষ্ট এবং নিরাপত্তার দায়িত্বশীল গরহাজির।
জুলাই মাসে স্থানীয় একজন সাবেক এমপি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গোহারুয়া ২০ শয্যার হাসপাতাল ভূতের বাড়ি ও গরু ছাগলের আড্ডাখানা। হাসপাতাল চালু করে মানুষকে সেবার সুযোগ দিন।’ একজন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাষায়, ‘হাসপাতালটাতে কোনো কোনো সময় একজন ডাক্তার বসেন। এটি পুরোপুরি চালু হলে করোনার সঙ্কটকালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও লাকসাম পর্যন্ত দৌড়াতে হবে না। তাই এর পূর্ণ কার্যক্রম চালু করা জরুরি। পর্যাপ্ত ওষুধসহ শয্যাগুলো চালু করা হোক। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে পত্র দেয়া হয়েছে যাতে পূর্ণাঙ্গভাবে এই হাসপাতাল চালু করা হয়।’ তবে কুমিল্লার সিভিল সার্জন জানিয়ে দিলেন, ‘হাসপাতাল চালু হলে বাড়তি ডাক্তারের দরকার হবে যা বর্তমানে দেয়া সম্ভব নয়। মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইনডোর ও আউটডোর উভয় সেবা দেয়া যাবে।’
অর্থাৎ, শিগগিরই হাসপাতালটি ‘সুস্থ’ হচ্ছে না। ততদিন অসংখ্য রোগীকে ‘ধৈর্য ধরতে হবে’ অথবা অবস্থার অবনতি ঘটে মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকতে হবে। কথায় বলে, বেড়ায় ক্ষেতের ফসল খেলে পাহারা দেবে কে? তেমনি এই হাসপাতাল নিজেই রোগী হয়ে গেলে কখন এখানে রোগীরা চিকিৎসা পাবেন?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা