২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনার তৃতীয় তরঙ্গের আশঙ্কা

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি আছে তো

-

চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গের পর শনাক্ত ও মৃত্যু উভয়ই কমে আসছিল। কিন্তু মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ভারতের সাথে দেশের সীমান্তবর্তী ২১ জেলায় পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। এর বাইরে আরো ২৯ জেলাতেও সংক্রমণ বাড়ছে। গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকায়ও শনাক্তের হার বাড়ছে। আইসিডিডিআরবির গবেষণা বলছে, করোনায় আক্রান্ত ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ৬৮ শতাংশই ভারতীয় নতুন ধরন অর্থাৎ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত।
বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপের আওতায় একদল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যে পূর্বাভাস দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আগামী জুলাই মাসে দেশে করোনার সংক্রমণ আরেকটি পিক বা সর্বোচ্চ চূড়ায় যেতে পারে। তাদের আঁকা রেখাচিত্র অনুযায়ী, তখন প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার শনাক্ত এবং ১০০ জনের মৃত্যু হতে পারে। যেহেতু করোনার নতুন ভারতীয় ধরন খুবই দ্রুত ছড়ায় এবং অনেক রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে; সেহেতু পরিস্থিতি গত মার্চ-এপ্রিলের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভাইরোলজিস্টদের মতে, দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকলে এবং সেটি ১০ শতাংশের উপরে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু দেশে চার সপ্তাহের কাছাকাছি সময় ধরে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। ধীরে ধীরে তা আরো বাড়ছে। গত বছর ঢাকা থেকে সংক্রমণ শুরু হয়ে সারা দেশে ছড়িয়েছিল। এবার ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। নতুন ধরনটি ধাপে ধাপে অন্য সব জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের জুন-জুলাইয়ে সংক্রমণ পিক বা চূড়ায় পৌঁছেছিল। এরপর ধাপে ধাপে তা কমতে থাকে। এক পর্যায়ে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার কমে প্রায় আড়াই থেকে দুই শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছায়। কিন্তু মার্চ থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারো বাড়তে থাকে। এ বছর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছায়। গত বছরের চূড়ান্ত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ হারে আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়। এরপর লকডাউনের কারণে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ কমতে থাকে। মে মাসে শনাক্তের হার কমে ৭ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছায়। কিন্তু ওই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার ফের বাড়তে শুরু করে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর ধারাবাহিক সংখ্যা পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। সামনে করোনার আরো একটি ঢেউয়ের শঙ্কা দেখা দেয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, সম্ভাব্য পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে কি? পুরো করোনাকালের অভিজ্ঞতা বলে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতার হার সামান্যই।
সামনের দিনগুলোতে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে ভারতের পরিস্থিতির আলোকে অবিলম্বে প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। বিশেষ করে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের মজুদ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা দরকার। অন্যথায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। এসব বিষয়ে দেশবাসীর পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো নয়। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে রোগী যখন বেড়েছিল, তখন স্বাস্থ্যসেবার ভগ্নদশা সামনে এসেছিল। সেই অবস্থার খুব একটি উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। এ কথাও ঠিক, দেশে করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আমজনতাও কম দায়ী নন। স্বাস্থ্যবিধি মানার বেলায় সবাই যেন উদাসীন। তাই সব বিষয় পর্যালোচনা করে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে আর সময় অপচয় নয়। সেইসাথে গণটিকাদান কর্মসূচি গতিশীল করতেই হবে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীলতার নমুনা দেখে সে প্রত্যাশা দুরাশা বলেই মনে হয়।


আরো সংবাদ



premium cement