২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অবশেষে সন্ধান মিলেছে সঙ্গীসহ ত্ব-হার

অবসান হোক নিখোঁজ সংস্কৃতির

-

দেশে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। সর্বশেষ ১০ জুন এ তালিকায় যুক্ত হয়েছিলেন আবু ত্ব-হা আদনান নামে এক ইসলামী বক্তা। তার সাথে একই গাড়িতে থাকা আরো তিনজনও নিখোঁজ হন। তবে ত্ব-হাসহ তার সঙ্গীরা ভাগ্যবান যে, শেষ পর্যন্ত তাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঘটনার পর প্রথম চার দিন স্বামীর সন্ধান চেয়ে রাজধানীর একাধিক থানায় ধরনা দিয়েছেন ত্ব-হার স্ত্রী। প্রথমে পুলিশের সহযোগিতা পাননি। এমনকি জিডি পর্যন্ত নিতে রাজি হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে পুলিশ জিডি গ্রহণ করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন- ত্ব-হাকে খুঁজে পেতে সরকার আন্তরিক। অবশেষে আট দিনের মাথায় সঙ্গীদেরসহ জীবিত ত্ব-হার সন্ধান মিলেছে। কিন্তু তাদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে বহুবিধ প্রশ্নের জবাব পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য পুলিশ বলছে, ব্যক্তিগত কারণে ত্ব-হা আত্মগোপনে ছিলেন।
ত্ব-হা একজন ধর্মপ্রচারক। নিখোঁজ হওয়ার পর তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি একজন মোটিভেশনাল বক্তা। সচেতনতা সৃষ্টিতে বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেন। তার মতে, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত যেসব বিষয়ের দিকে নজর দেয়; সেগুলোর চর্চায় সমস্যা নেই। যে বিষয়গুলো সমষ্টিগত এবং যার মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থা প্রভাবিত হয়; সেগুলোর চর্চায় প্রতিবন্ধকতা আসে। তখন একাধিক বহিরাগত শক্তির রোষানলে পড়তে হয়। এ ধরনের বক্তব্য দেয়ায় তার নিজের জীবন হুমকিতে; সে কথাও বলেছিলেন। তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রীর বর্ণনা মতে, ঘটনার দিন রাতে ঢাকায় ফিরছিলেন ত্ব-হা। সর্বশেষ হোয়াটসঅ্যাপে গাড়ির অবস্থানের ম্যাপ পাঠান। জায়গাটি ছিল রাজধানীর গাবতলী। স্ত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে কারা যেন অনুসরণ করছে। এরপর থেকে সঙ্গীদেরসহ তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
গত বছর আগস্টের শেষে বিশ্ব এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স দিবস উপলক্ষে ১২টি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে জোরপূর্বক নিখোঁজের বিষয়ে একটি যুক্ত বিবৃতি দেয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা দ্বারা ৫৭২ জন জোরপূর্বক নিখোঁজের শিকার বলে প্রতিবেদন হয়েছে। তাদের কেউ মুক্তি পান, কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়, কারো ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘অ্যানকাউন্টারে’ প্রাণ হারানোর খবর বের হয়। এদের মধ্যে বেশির ভাগেরই সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ হওয়াদের একটা বড় অংশকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তুলে নেয়ার সময় সাধারণত সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সংস্থার পরিচয়ে অভিযান চালানো হয়। তারা তখন নিজের নাম ধাম পরিচয় দেয়। পরে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্টেশনে যোগাযোগ করতে বলে। পরবর্তীতে যখন স্বজনরা নিকটস্থ থানা কিংবা র্যাবসহ অন্য সংস্থার অফিসে যোগাযোগ করেন, তখন কেউ এ ধরনের অভিযান পরিচালনার কথা স্বীকার করে না। এমনকি নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজখবর দিতে সাহায্য করা কিংবা কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেও সহযোগিতা করতে চায় না।
বাংলাদেশে নিখোঁজের ঘটনাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম আসে। তারা যখন নিখোঁজ ব্যক্তিকে উপস্থিত করতে পারে না; তখন অভিযুক্ত সরকারি বাহিনী নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের তাগিদও বোধ করে না। ফলে বহু মানুষের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কোনো প্রতিকারও মিলছে না। সর্বশেষ ত্ব-হার ঘটনায় তার স্ত্রীর আহাজারি সবাই দেখেছেন। রাষ্ট্র প্রথমে ঘটনাটির কোনো দায়িত্ব নিতে চায়নি। এ ধরনের ঘটনা আগেও বহু ঘটেছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনায় পরিবারগুলো কোনো প্রতিকার পায়নি। ত্ব-হা ও তার সঙ্গীদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো- তাদের সন্ধান মিলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটুকু আন্তরিক হতো, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কারণ, এর আগেও একই ধরনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা উল্লেখ করার মতো না। ত্বা-হাদের ফিরে পাওয়ার ভেতর দিয়ে দেশে নিখোঁজ সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়েছে, এমন বলার সময় এখনো আসেনি। অতীতেও কিছু ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার পর ফিরে এসেছেন; কিন্তু দেশে নিখোঁজের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি। প্রশ্ন হলো- একটি স্বাধীন দেশে এটি আর কত দিন চলবে। এমন অবস্থায় নাগরিকেরা নিরাপদবোধ করেন না। যারা বেআইনিভাবে অপকর্মটি করছে; তাদের বিচারের আওতায় আনার সাথে সাথে দেশে নিখোঁজ-সংস্কৃতির অবসান হবে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।


আরো সংবাদ



premium cement