২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিন

-

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ফের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওই তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আর আগেই বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার পর। বারবার ছুটি বাড়ানোয় স্কুল-কলেজ খোলার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা আশাহত হচ্ছে। ইউনিসেফ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বে বেশি দিন স্কুল বন্ধ থাকা ১৪টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বিকল্প কী, তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা এখনো জানানো হচ্ছে না।
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তার পর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়মিত বিরতিতে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বাড়াচ্ছে। ফলে ছুটি বাড়ানোর অপরিকল্পিত পদক্ষেপ দেখতে দেখতে ক্লান্ত ও হতাশ সবাই। সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে পরিস্থিতি উত্তরণে পথ বাতলাতে পারছে না।
দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীর প্রায় চার কোটি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাব বহুমাত্রিক। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি শিক্ষাবর্ষের পুরোটাই হারিয়ে গেছে। আরেকটির অর্ধেকের মতো চলে গেছে। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে শিক্ষা খাত। গবেষণায় এসেছে, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আর পড়াশোনায় ফিরবে না। কেউ শিশুশ্রমে নিয়োজিত। কেউ বাল্যবিয়ের শিকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা সমাপ্ত না হওয়ায় কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারছেন না।
বেসরকারি একটি গবেষণায় জানা গেছে, প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারা বা শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। শুধু পড়াশোনার ক্ষতি নয়, ঘরবন্দী শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুরা ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তবে করোনা সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা প্রত্যাশিতই ছিল; কিন্তু যে প্রশ্নের উত্তর নেই তা হলোÑ মহামারী শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে না এলে সরকারের পরিকল্পনা কী। জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, জনসংখ্যার বড় অংশকে গণটিকাদানের আওতায় না আনতে পারা পর্যন্ত করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এতে এক থেকে দুই বছর বা আরো বেশি লাগতে পারে। প্রশ্ন হলো, তত দিন কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, সরাসরি পাঠদান ও পরীক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে।
শিক্ষাবিদরা ধাপে ধাপে খোলার পরামর্শ দিলেও মন্ত্রণালয় একসাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চায়। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আবার শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজেও গতি নেই। এটা ঠিক, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হলে বিকল্প ব্যবস্থা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কী, তা জানানো উচিত। দীর্ঘ বন্ধে উচ্চ শিক্ষায় সেশনজট বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে আন্দোলনও করেছেন। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে তা মেনে নিয়েই মানুষকে বাস করতে হবে। তাই অনির্দিষ্ট সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না রেখে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কিভাবে সচল করা যায়, সরকারকে সে দিকে নজর দিতে হবে।
শিক্ষাবিদদের মতো আমরাও মনে করি, সবাইকে একসাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না এনে প্রথমে এলাকাভিত্তিক এবং শ্রেণিভিত্তিক ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাবভাব দেখে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তারা এখান থেকে বেরোনোর পথ দেখাতে পারছে না। অথচ অনির্দিষ্টকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাও সমাধান নয়। বাস্তবতা হলো, এমন পরিস্থিতি থেকে বের হতে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে, একসাথে নয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে সংক্রমণ নেই বা কম সংক্রমিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গতানুগতিক চিন্তার বাইরে পরিকল্পনা নিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement