১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্যসহায়তা

নজরদারি জোরদার করতে হবে

-

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকারের অন্যতম কর্মসূচি হলো এটুআই। ইংরেজিতে পুরো নাম অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন। এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে একটি টেলিফোনের হটলাইন। ৩৩৩ নম্বরের সেই হটলাইনে কল করে বেশ কিছু সেবা পাওয়ার কথা। করোনা মহামারী, কৃষি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য দূরীকরণ এমনই সব বিষয়ে সরকারি সেবা সহজে ও সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই এর সাথে যুক্ত খাদ্য সহায়তার বিষয়টি সম্প্রতি নতুন করে চালু করা হয়েছে। গরিবদের জন্য মানবিক সহায়তা দিতে সরকার এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। অর্থাৎ ৩৩৩ নম্বরে কল করে গরিব মানুষ সরকারি খাদ্যসহায়তা পাবেন। বিশেষ করে করোনাকালে লকডাউনসহ নানা কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া যেসব মানুষের ন্যূনতম খাবারের সংস্থানও নেই তারা এই সুবিধা নিতে পারবেন। আর দেশের সব জেলা ও উপজেলায় এটি কার্যকর।
উদ্দেশ্য মহৎ তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু কর্মসূচিটি ফলদায়ক হচ্ছে বলার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে যেসব খবরাখবর গণমাধ্যমে আসছে তা রীতিমতো হতাশাব্যঞ্জক। গত শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সরকারি নির্দেশনার পরও গত দেড় মাসে হটলাইন ‘৩৩৩’ নম্বরে কল পেয়ে একটি পরিবারকেও খাদ্যসহায়তা দেয়া হয়নি এমন জেলার সংখ্যা আটটি। উপজেলার সংখ্যা প্রচুর। আর ৯টি সিটি করপোরেশন এলাকায়ও কাউকে সহায়তা দেয়া হয়নি।
খবরে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গত ২৫ এপ্রিল থেকে ২৯ মে পর্যন্ত সাহায্য চেয়ে ‘৩৩৩’ নম্বরে কল করেন দুই হাজার ২৪০ জন। কিন্তু একজনও সাহায্য পাননি। একইভাবে একই সময়ের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কল করেন দুই হাজার ৯১২ জন। একজনকেও সহায়তা দেয়া হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দৈনিককে বলেন, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যেভাবে কাজ হচ্ছে, সেভাবে সিটি করপোরেশনগুলোতে হয়নি। বেশির ভাগ সিটি করপোরেশন সন্তোষজনকভাবে কাজ করেনি।
কর্মসূচি বাস্তবায়নের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে প্রশাসনের গা ছাড়া ভাব স্পষ্ট। কিন্তু তারা সেটি স্বীকার করতে চান না। জেলা প্রশাসকদের কেউ বলছেন, একজনকেও সহায়তা দেয়া হয়নি এমনটা হতেই পারে না। কেউ বলছেন, কোনো ফোন কলই পাননি। আবার কল করে প্রশাসনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করেই একজন অসহায় গরিব মানুষকে শাস্তি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই একটি দৃষ্টান্ত থেকে স্পষ্ট, প্রশাসনে যারা আছেন তাদের মনে গরিবের প্রতি সহানুভূতির অভাব আছে। গরিব মানুষ কল করলে তারা বিরক্ত হন। কারণ তারা নিজেদের জনগণের খাদেম মনে করেন না, ব্রিটিশের মতো এখনো প্রভু মনে করেন।
এই প্রভুসুলভ মনোভাব না পাল্টালে সরকারের কোনো কর্মসূচিই বাস্তবায়ন হবে না। যেমন হয়নি সীমান্তে ও বন্দরগুলোতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেয়া সরকারের বিশেষ কর্মসূচি। করোনা মহামারীর প্রভাবে দেশে অন্তত আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। তাদের সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি পুনর্বাসনে বড় কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়া জরুরি। কিন্তু সরকার এখনো নতুন দরিদ্রদের বিষয়টি স্বীকারই করেন না। ফলে সঙ্কট উত্তরণে বাস্তব কর্মসূচিও নেয়ার প্রয়োজন তারা বোধ করছেন না।
কিন্তু প্রশাসনের অনীহায় দেশের গরিব অসহায় মানুষগুলোর জন্য সরকারের নেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সেবা ভণ্ডুল হয়ে যাবে এটা হতে পারে না। ৩৩৩ নম্বরে কল করে কেউ যেন সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হন সে জন্য নজরদারি জোরদার করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement