২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গণপূর্ত দফতরে অস্ত্র প্রদর্শন

ঠিকাদারির সম্পর্ক রয়েছে কি

-

উন্নয়নকাজের নামে একশ্রেণীর ঠিকাদারের অন্যায় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের বিষয়টি সবার জানা। প্রকল্প শেষ না করে তারা অর্থ তুলে নেন। অথচ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরপরই দেখা যায় ঠিকভাবে কাজটি করা হয়নি। রাস্তা ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণের পর এমনটা প্রায় দেখা যায়। দেখা যায় রাস্তা তৈরির অল্প দিনের মধ্যে উপরের পিচ উঠে গেছে, কোথাও নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যে চলচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে, নির্মাণের পরপরই ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে পড়ছে। সংবাদমাধ্যমে এমন খবর নিয়মিত আসছে। মূলত উন্নয়নের নামে একধরনের হরিলুটের পেছনে রয়েছে ক্ষমতার নিবিড় সম্পর্ক। ঠিকাদারদের কেউ ক্ষমতাসীন দলের পদপদবির অধিকারী। আবার কেউ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নিয়োজিত ঠিকাদার। কেবল উন্নয়ন প্রকল্প নয়ছয় করতে তাদের পরস্পরের দহরম মহরম। অনেকসময় ভয়ভীতি দেখিয়েও তারা কাজ বাগিয়ে থাকেন।
গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা একটি অস্ত্রের মহড়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন পাবনা জেলার গণপূর্ত কার্যালয়ে। ৬ জুন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সশস্ত্র অবস্থায় নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে ঢুকে পড়েন। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন দলীয় নেতাদের নিয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ে ঢুকছেন। পেছনে শর্টগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান। আরেকটি শর্টগান হাতে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু। তারা যখন নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসে ঢোকেন তখন তিনি কর্মস্থলে ছিলেন না। অস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ভাইরাল হলে গণপূর্ত অফিসে প্রবেশকারী নেতারা জানানÑ এমনটা করা উচিত হয়নি। একটি বেআইনি কাজ করার পর তা জানাজানি হওয়ায় এখন নিজেদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের অনুশোচনা করলে অপরাধের দায়মুক্তি কেউ পেতে পারেন না। তাহলে অনেকে অপকর্ম করে অনুশোচনার নামে দায়মুক্তি চাইবেন।
প্রশ্ন হলোÑ নির্বাহী প্রকৌশলী যখন অফিসে নেই; তখন অস্ত্র উঁচিয়ে কেন সেখানে ঢুকতে হবে? অস্ত্রধারীরা বলেছেন, এসব অস্ত্র লাইসেন্স করা। নিজেদের নিরাপত্তায় সেগুলো বহন করেন। কিন্তু একটি সরকারি অফিসে কিভাবে সরকারদলীয় নেতাদের নিরাপত্তার হুমকি থাকতে পারে? প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বেশ কিছু দিন ধরে গণপূর্ত অধিদফতরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। সরকারি উন্নয়নকাজে নিজেদের হিস্যা সহজে পেতে এই সশস্ত্র মহড়া কাজে আসবে। দুর্ভাগ্য হলোÑ এ ধরনের ক্ষমতা দেখিয়ে উন্নয়নকাজ বাগিয়ে নেয়ার প্রকাশ্য অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রশাসনের ত্বরিত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। ঘটনাটিতেও গণপূর্তের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, তাকে কোনো হুমকি দেয়া হয়নি। বাস্তবে যারা অস্ত্রের ভাষায় কথা বলেন, তারা মুখে কিছু বলেন না। অন্য দিকে পুলিশ প্রশাসনও চুপ। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়া হয়নি। এ ঘটনার পর দেখা যাবে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীটি সহজে টেন্ডার পাচ্ছে।
কয়দিন আগের একটি ঘটনা, কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এক প্রকৌশলীকে প্রকাশ্যে রাস্তায় পেটানো হয়। এমন ঘটনা একটি-দু’টি নয়। এক দশক ধরে বহু ঘটনাই ঘটেছে। যারা জনগণের পক্ষ হয়ে অনিয়ম দুর্নীতি রুখতে চান; তারা অসহায়ভাবে মার খাচ্ছেন। আর যারা শক্তি প্রদর্শন করে জনগণের অধিকার হরণ করছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার কোনো তাগিদ নেই। এই প্রবণতা রুখতে পাবনায় অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শনের ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। এর সাথে ঠিকাদারি পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। একটি সরকারি অফিসে প্রভাবশালী রাজনীতিকরা কেন প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে গেলেন তা খোলাসা করতে হবে। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবেন; তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement