২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বর্ষার প্রারম্ভেই নদীভাঙন শুরু

টেকসই পরিকল্পনা নিন

-

আমাদের দেশে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নদীভাঙনে প্রতি বছরই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিলীন হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, গত চার দশকে দেশের প্রায় এক লাখ হেক্টর ভূমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে ফি বছরই নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। যাদের অনেকে একসময় ছিলেন অবস্থাপন্ন, যারা ছিলেন সকাল বেলা ‘আমির’, তারাই নদীভাঙনের শিকার হয়ে সব হারিয়ে বিকেল বেলা হয়ে যাচ্ছেন ‘ফকির’। এবারো বর্ষার শুরুতেই দেখা দিয়েছে দেশের বড় সব নদীতে ভাঙন। চলতি মৌসুমে ভরা বর্ষার আগেই ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাউবো দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর প্রায় তিন শ’ ‘ভাঙনপ্রবণ’ এলাকা চিহ্নিত করেছে। প্রায় প্রতি বছরই এসব এলাকা কমবেশি ভাঙনের শিকার। চলতি বর্ষা মৌসুমেও ৫২টি জেলার ২৭২টি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে বলছে সরকারি সংস্থাটি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পূর্বাভাস হলো, দেশের ১৩টি জেলার ২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা এ বছর ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। এর মধ্যে তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছেÑ কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, রাজশাহী, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে। শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা গত দুই বছর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে। যদিও সিইজিআইএসের পূর্বাভাসের তালিকায় এবার ওই তিন জেলা নেই। তবু উল্লিখিত জেলাগুলোতেও চলতি বর্ষার প্রারম্ভেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি গত বছর দেশের ১৩টি জেলায় ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা ভাঙনের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করেছিল। বাস্তবে এর চেয়েও বেশি এলাকা ভেঙেছে; যার পরিমাণ ছিল ৩৮ বর্গকিলোমিটার।
সরকারের তরফ থেকে নদী ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছরই বহু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এসব প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে হয় না বলেই ভুক্তভোগীসহ সবার কাছে প্রতীয়মান। দেখা যায়, নদী দখল-দূষণ বন্ধ করতে, নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়, এর জন্য বরাদ্দ করা ৫০ শতাংশ অর্থও সঠিভাবে ব্যয় হয় না। বেশির ভাগই তছরুপ করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকে বরাদ্দ অর্থের একটি অংশ আত্মসাৎ করেন বলে অতীতে দেখা গেছে। এ প্রবণতা বর্তমানে আরো বেড়েছে।
সরকার শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মার ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নিয়েছে; কিন্তু অন্যান্য ভাঙনপ্রবণ এলাকার দিকে তেমন নজর নেই। ভাঙনের এ বিপর্যয়কে নিছক ভূমির হিসেবে দেখা উচিত নয়। নদীভাঙনের শিকার একেকটি পরিবার সব সম্বল হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ফলে জীবনের বাকি পুরো সময় তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। সেই দুঃখ দেখার যেন কেউ নেই। বিপুলসংখ্যক এই মানুষ এমন দুর্দশায় পড়তেন না; যদি দেশের নদীব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন। নদীভাঙন রোধে সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি সত্ত্বেও বাস্তবে ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই।
সবার মতো আমরাও মনে করি, নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীভাঙন একটি বিপর্যয়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে সনাতনী ও আধুনিক পদ্ধতির সমন্বয়ে উদ্ভাবন করতে হবে দেশীয় পরিবেশ উপযোগী টেকসই কর্মপন্থা। সে অনুসারে নিতে হবে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, যাতে নদীভাঙন কমিয়ে আনা যায়। তবে সবার আগে জরুরি, নদীর স্বাভাবিক গতিপথ নিশ্চিত করা। তাহলে কমে আসবে নদীভাঙন। এর জন্য সর্বপ্রথম দরকার নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদীগুলোতে কার্যকর খনন কর্মসূচি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলোÑ নদীর খননকাজে সরকারি বিপুল টাকা বরাদ্দ থাকলেও ‘হরিলুট’ ছাড়া কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বেশির ভাগ অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে নদীভাঙন সহনীয় পর্যায়ে আসবে।


আরো সংবাদ



premium cement
চীনা কোম্পানি বেপজা অর্থনৈতিক জোনে ১৯.৯৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মৃত মায়ের গর্ভে জন্ম নিলো নতুন প্রাণ দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ মারা যায়নি : পুলিশ সুপার হামাসকে কাতার ছাড়তে হবে না, বিশ্বাস এরদোগানের জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তার উদ্যোগ ভালো লেগেছে : সীতাকুন্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১০ দেশের অংশগ্রহণে সামরিক মহড়া শুরু করল আরব আমিরাত গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা?

সকল