২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
এলপিজির খাত নিয়ে হঠাৎ শঙ্কা

সিলিন্ডারের দাম যৌক্তিক হওয়াই কাম্য

-

দেশে এলপিজির (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহার নানা কারণেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গৃহস্থালি কাজের জন্য গ্যাস সংযোগ নিরুৎসাহিত করা এর মধ্যে অন্যতম। এই গ্যাস তুলনামূলক সস্তা এবং ঝামেলাও কম। গ্যাস সংযোগ পেতে এবং প্রতি মাসে বিল পরিশোধের ঝক্কি বড় কম নয়। তুলনায় এলপিজির সিলিন্ডার কেনা সহজ ও ঝামেলাহীন। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকাতেও এখন অনেকে গ্যাসের চুলায় রান্না করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। ফলে সিলিন্ডারের চাহিদা বাড়ছে। ২০১৩ সালে চাহিদা ছিল মাত্র ৮০ হাজার মেট্রিক টন। গত সাত আট বছরের মধ্যে সেটি বেড়ে বর্তমানে ১২ লাখ টন ছাড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ লাখ টন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সাড়ে ৩০ লাখ টনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু গৃহস্থালি পর্যায়ে নয়। এলজিপির বড় ব্যবহার মূলত শিল্প-কারখানায়। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে আসায় অনেক শিল্পে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য শিল্প-কারখানায় এলপিজি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন শিল্পপতিরা। দামে কম ও সহজলভ্যতার কারণে এটি ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হয়ে উঠছে।
কিন্তু এলপিজির সরবরাহ নিশ্চিত করা নিয়ে জটিলতা আছে। এটি সম্পূর্ণ আমদানিভিত্তিক পণ্য। প্রায় ৯৮ শতাংশ আমদানি করা এবং বেশির ভাগ টার্মিনাল মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তার পরও চাহিদা বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় এই খাতে বিনিয়োগ করছেন। গত এক দশকেরও কম সময়ে এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ লাখ মানুষ। ফলে এই খাতটি এখন আর মোটেও অকিঞ্চিৎকর নয়।
কিন্তু এরই মধ্যে এই খাতের বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, সরকার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম যেভাবে নির্ধারণ করেছে তাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত মে মাসে এলপিজির ১২ কেজির প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করে দেয় ৯২০ টাকা। পরের মাসেই সেটা কমিয়ে ৮৪২ টাকা করা হয়। অথচ বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। বিইআরসি কিসের ভিত্তিতে দাম কমালো তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম নির্ধারণে তাদের বিপুল বিনিয়োগ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। মনগড়া দাম নির্ধারণ করে তাদের বিনিয়োগের ওপর হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছে। এটিকে এই খাতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসাবেও দেখছেন কেউ কেউ। অথচ গত এপ্রিলে দাম নির্ধারণের আগ-পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি সুবিধা নিয়েছেন। অত্যন্ত চড়া দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করেছেন। সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। গ্রাহকদের সীমাহীন ভোগান্তির কারণে শেষ পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার ফোরামের দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিইআরসি দাম নির্ধারণ করে দেয়। এখন দাম কমিয়ে দেয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ।
এ দেশে কোনো জিনিসেরই দাম যৌক্তিক নয়। বাজারে নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। যখন যেভাবে খুশি দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এসব বিষয় দেখার মতো কোথাও কেউ আছে বলে মনেই হয় না। সেই অবস্থায় এলপিজির দাম কমিয়ে নির্ধারণ করায় সাধারণ মানুষ কিন্তু সামান্য হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
এলপিজি খাতে মোট বিনিয়োগের কত শতাংশ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের জন্য বরাদ্দ তার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সিলিন্ডারের দাম কমানোর কারণে পুরো বিনিয়োগ হুমকিতে পড়বে এমনটা বলার অবকাশ কম।
তার পরও আমাদের বিশ্বাস, সব পণ্যেরই দাম যৌক্তিক হওয়া উচিত। ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং ভোক্তা কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে প্রয়োজনে দাম পুনঃনির্ধারণ করা যেতেই পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
কুলাউড়ায় জঙ্গল থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার ঈদগাঁওতে মাদককারবারি গ্রেফতার শিক্ষায় ব্যাঘাত : ফেসবুক-টিকটক-ইনস্টাগ্রাম-স্ন্যাপচ্যাটের বিরুদ্ধে ২৯০ কোটি ডলারের মামলা আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর

সকল