১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
৪৮ হাজার তাঁতশ্রমিক বেকার

বস্ত্রশিল্পে বিরাট প্রভাব ফেলেছে

-

এবার ঈদের বাজারেও তাঁতের শাড়ির দাম তেমন নেই। এর কারণ মহামারীর আবার ধাক্কা যাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ বা ঢেউ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান তাঁতশিল্প এলাকা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এখন তাঁতশিল্পীদের চরম দুর্দিন। ন্যায্যমূল্যে শাড়ি বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে তাঁত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধলক্ষ তাঁতশ্রমিক বর্তমানে বেকার। যারা তাঁত চালু রেখেছেন, মন্দার এ বাজারে তাদের আয় এত কমে গেছে যে, তাঁরাও এ শ্রমিকদের মজুরি মেটাতে পারছেন না। তাঁতবস্ত্রের উৎপাদন ব্যয় এখন বাস্তবে বেশি বিক্রয়মূল্যের চেয়ে। এ কারণেই এমন হতাশাজনক পরিস্থিতি। একটি সহযোগী দৈনিকের সচিত্র প্রতিবেদনে এর উল্লাপাড়া সংবাদদাতা খবরগুলো দিয়েছেন।
তাঁতিদের কথা, করোনাকালের সর্বব্যাপী প্রভাবে রঙ ও সুতার দাম বেড়েছে। তদুপরি, লকডাউনে পাইকাররা হাটবাজারে আসতে পারছেন না। এ অবস্থায় লোকসান দিয়েই স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে তাঁতের শাড়ি বেচতে হচ্ছে। জানা গেছে, কেবল উল্লাপাড়া উপজেলার ছয়টি গ্রামেই হাজার পাঁচেক পরিবার তাঁতশিল্পে নিয়োজিত আছে। তাদের তাঁতের সংখ্যা ২২ হাজার এবং শ্রমিক ৬৬ হাজারের মতো। করোনা প্রতিরোধের প্রথম লকডাউনকালে বহু তাঁতি ব্যবসায়ে ক্ষতি হওয়ায় সহায়-সম্বল হারিয়ে ফেলেছেন। তখনই চার হাজার তাঁত বন্ধ হওয়ায় ১২ হাজার শ্রমজীবী তাঁতশিল্পী বেকার হয়ে যান। আবার ঋণ নিয়ে কোনো মতে ঘুরে দাঁড়াবার জন্য তাঁতিরা চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসজনিত মহামারী কোভিডের আবার ঢেউ এবং তা প্রতিরোধের দ্বিতীয় লকডাউনে ভাগ্যহত এই তন্তুবায়ীদের সব স্বপ্ন নস্যাৎ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চলমান লকডাউনের সময়ে সুতার দাম বেড়ে গেছে এক লাফে শতকরা ৪০ ভাগ। এতে উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় লোকসান এড়াতে বহু তাঁতই বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় ৩৬ হাজার তাঁতশ্রমিক মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। লকডাউনের মধ্যে অনেকে কাপড় বিক্রি করতে না পেরে তাঁত বন্ধ রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা জানান। কোনো কোনো মালিক শ্রমিকের মজুরি কমিয়ে দিয়েছেন। উল্লাপাড়ার একজন তাঁতমালিকের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যক্তি রঙ-সুতার দাম ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করায় তিনি ২০টি তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন। বাজারে সুতা ও রঙের দাম বাড়ালেও তাঁতের কাপড়ের দাম কম। একটি হাইব্রিড শাড়ির পেছনে খরচ আড়াই শ’ টাকা। অথচ তা বিক্রি করতে হয় ৫০ টাকা কম দামে। এভাবে ব্যবসা করা অসম্ভব বলে তাঁতিরা মনে করছেন।
তাঁত বোর্ড জানায়, ‘উল্লাপাড়ায় পাঁচ হাজার পরিবারের ২২ হাজার তাঁতের মধ্যে পাঁচ হাজার তাঁত মহামারীতে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এখন ১৫ হাজার শ্রমিক বেকারত্বের শিকার। তাদের সাহায্য দেয়া হয়েছিল প্রথম ধাপে। এবারো সাহায্য দিতে আবার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
তাঁতশিল্প বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ঐতিহ্য। এ দেশের পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা প্রভৃতি স্থানে উৎপাদিত তাঁতবস্ত্রের সুখ্যাতি বিশ্বব্যাপী। শুধু উল্লাপাড়াতেই যে বিপুলসংখ্যক তাঁতশ্রমিক কাজ হারালেন, তার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে আমাদের বস্ত্রশিল্পে। তাই উৎপাদন, কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধিসহ জাতীয় সমৃদ্ধির সার্বিক বিবেচনায় অবিলম্বে এ ব্যাপারে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
সবার প্রত্যাশা, উল্লাপাড়ার তাঁতশিল্পসমেত দেশীয় বস্ত্রের ঐতিহ্যের পর্যাপ্ত প্রসার ও ব্যাপক বিপণনের জন্য সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল