২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেশে প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব প্রকট

সমন্বিত কর্মকৌশল নিন

-

করোনা সংক্রমণ রোধে গত বছরের মার্চের শেষ দিক থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর দেশের অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল। তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারান। অর্থনীতি ফের সচল হলেও অনেকেই এখনো কাজ ফিরে পাননি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ওপর করোনার অভিঘাত তীব্রতর। যারা আগে বিপন্ন ছিলেন না তারাও এখন সঙ্কটে। বহু পরিবার ঋণের জালে আটকা পড়েছে। সঞ্চয় হারাচ্ছে। প্রতিবন্ধী, বস্তিবাসী ও চরের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
করোনার প্রভাবে দেশে প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম’ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে’ শীর্ষক সংলাপে এমন কথা বলা হয়েছে। প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব কমাতে চারটি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। ভোগ, বিনিয়োগ ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা এবং এর পাশাপাশি প্রকৃত রফতানি বাড়ানো। এ জন্য আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট হওয়া উচিত সম্প্রসারণমূলক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে, যারা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না, তাদের ছদ্ম বা প্রচ্ছন্ন বেকার বলা হয়। করোনার আগে দেশে এমন মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৬ লাখ, যারা পছন্দমতো কাজ পাননি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, আসন্ন বাজেটে মানুষের ভোগ ব্যয় না বাড়লে পুষ্টিহীনতা বাড়বে। দারিদ্র্যের হার আরো বাড়বে। দেশে করোনাকালে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। একই সাথে নেট রফতানি বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ছয় কোটি ৩৫ লাখ। আর তাদের মধ্যে কাজ করেন ছয় কোটি আট লাখ নারী-পুরুষ। বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। শতাংশের হিসাবে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তবে গত সেপ্টেম্বরে বিবিএস এক টেলিফোন জরিপ করে দেখেছে, গত বছর করোনা শুরুর তিন-চার মাসে ব্যাপকভাবে বেকারত্ব বেড়েছিল। মার্চের তুলনায় জুলাইয়ে বেকারত্ব বাড়ে ১০ গুণ। গত বছরের মার্চ মাসে বেকারত্বের হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ, জুলাইয়ে বেড়ে হয় ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে বিবিএসের মতে, সেপ্টেম্বরে এসে বেকারত্বের হার নেমে আসে সেই ৪ শতাংশে, অর্থাৎ ২৭ লাখ। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে বেকারত্বের হার যে আরেক দফা বেড়েছে, তা নিশ্চিত।
বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক সমীক্ষা বলেছে, কোভিড-১৯-এর কারণে বাংলাদেশে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (এমএসএমই) কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছেন। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ২০ শতাংশ আসে এই অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান থেকে। প্রায় দুই কোটি নারী-পুরুষ এই খাতে কাজ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ হলেও কর্মসংস্থান তেমন বাড়েনি। দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি। এসব মানুষকে টেনে তুলতে হলে কাজে ফেরাতে হবে। সুতরাং জাতীয় পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনাকে অবশ্যই কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন উৎপাদনশীল খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ। এটাই এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কর্মসংস্থান একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে সমন্বিত পরিকল্পনা লাগবে।
সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট করে আর্থিক বরাদ্দ থাকা দরকার। একটি নতুন ‘সামাজিক সংহতি তহবিল’ তৈরি করে করপোরেট ও বেসরকারি অনুদানে আর্থিক উৎসাহ (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে) বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ছাড়া সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধারে বাজেটে দুই-তিন বছর মেয়াদি একটি কৌশল নির্ধারণ করা করা প্রয়োজন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাঙ্গামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ৬ প্রতিবাদ সমাবেশকারীদের গ্রেফতারের নিন্দা জামায়াতের ‘সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না’ ফরিদপুরে বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়তে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনের অভিযোগে ৫ জন‌ আটক ঈশ্বরদীতে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ তীব্র তাপদাহে খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করল একতা বন্ধু উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গলাচিপায় পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে : ইসি

সকল