২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হেদায়েতের জন্য হোক প্রার্থনা

-

মানুষের স্বাভাবিক একটি প্রবণতা হচ্ছে, মানুষ ভুলে যায়। সৃষ্টির পর মানুষের প্রতি আল্লাহতায়ালার প্রশ্ন ছিল ‘আমি কি তোমাদের স্রষ্টা নই’। সেই প্রশ্নের উত্তরে মানুষ একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছিল ‘নিশ্চয়ই আপনিই আমাদের স্রষ্টা’। পৃথিবীতে আসার পর আল্লাহকে মানার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শরিক না করাই ওই অঙ্গীকার নেয়ার উদ্দেশ্য। সূরা আ’রাফের ১৭২ নম্বর আয়াতে এর পরই আল্লাহ বলছেন, এমন যেন না হয় কিয়ামতের দিন তোমরা যেন না বলোÑ আমরা এ ব্যাপারে বেখবর ছিলাম। পরের আয়াতে আল্লøাহ মানুষকে সতর্ক করে কিয়ামতের দিন তারা কী মন্তব্য করবে তা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘শরিক তো করেছিল আমাদের বাপ-দাদারা, আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর। এখন কি আপনি তাদের ভুল কার্যক্রমের জন্য আমাদের ধ্বংস করে দেবেন?’ মানুষ আল্লøাহকে একমাত্র ইলাহ বা উপাস্য হিসেবে মান্য করার ব্যাপারটি ভুলে যায়। সেটাই আল্লøাহ আবার তার বার্তাবাহক ও আসমানি কিতাব দুনিয়াতে পাঠিয়ে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন।
পৃথিবীতে আসার পর সত্যি সত্যি মানুষ আল্লøাহর কাছে করা প্রতিশ্রুতি ভুলে যাচ্ছে। তারা স্রষ্টার সাথে আরো বিভিন্ন কথিত ইলাহকে সমকক্ষ মনে করে থাকে। পৃথিবীর মানুষের বড় একটি অংশ সরাসরি মূর্তিপূজারী। বাদ বাকি মানুষের বিরাট একটা অংশ আল্লাহকে মানতে গিয়ে তার সাথে আরো ‘উপাস্য’ হাজির করছে। কেউবা আল্লাহর পাঠানো আদর্শের পাশাপাশি অন্যান্য মতাদর্শকে গ্রহণ করছে। তারা বিশ্বাসই করতে পারে না যে, এটাও শরিকানা। এ ছাড়া মানুষ আল্লাহ তায়ালার পাঠানো বার্তার চেয়ে নিজের কামনা-বাসনা-ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এটা যে মান্যতার ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে সমকক্ষ মনে করা সেটা বেমালুম তারা ভুলে যাচ্ছে। এগুলো স্রষ্টাকে পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা। এই অন্ধকার দূর করার অবলম্বন স্রষ্টার পাঠানো কথা আসমানি কিতাব। এই নির্ভুল কিতাবের কথাগুলো জানা বোঝা ও মানার মাধ্যমে মানুষ নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর একক কর্তৃত্বের অনুসারী হতে পারে। আসমানি কিতাবের ধারায় সর্বশেষে এসেছে পরিপূর্ণ কিতাব মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। খাতামুন ন্যাবিয়্যিন হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ওপর এ সর্বশেষ কিতাব নাজিল হয়েছে।
সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এটি নাজিল হয়েছে রমজানে মাসে। এতে রয়েছে হেদায়েত বা স্পষ্ট পথের দিশা ও ফুরকান (মানদণ্ড)।’ কুরআনে ৯৭ নম্বর সূরা কদরে বলা হচ্ছে, আমরা একে (কুরআন) নাজিল করেছি এক মর্যাদাপূর্ণ রাতে।’ এ রাতটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এই সূরায় তুলে ধরা হয়। নবীর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আল্লাহ প্রশ্ন করে জানাচ্ছেন, ‘তোমরা কি জানো এ রাতটির মর্যাদা কত? এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ এখানে কিন্তু বলা হয়নি, একটি রাত হাজার রাতের চেয়ে মর্যাদাবান, বলা হয়েছেÑ হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদাবান। ওই সূরায় আল্লাহ এরপর বর্ণনা দিচ্ছেন কেন এ রাতটি উত্তম। এর কারণ হিসেবে বলছেন, ফেরেশতা ও রুহ সব ধরনের আদেশ নিয়ে সে রাতে নাজিল হয়। এই রাতটির ব্যাপ্তি ফজর পর্যন্ত থাকে বলে আল্লাহতায়ালা জানাচ্ছেন। এখানে একটি বিষয় আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দেননি। তা হলো, রাতটি কোন রাত। এটা অনির্দিষ্ট থাকায় রমজান মাসের প্রত্যেকটি রাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এটা মানুষের জন্য আল্লাহর দিকে ফেরার একটি বিশেষ সুযোগ।
মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া হচ্ছে হেদায়েত। একজন মানুষ পৃথিবীতে যত সুখ্যাতি লাভ করুন, তিনি যদি হেদায়েত না পান তাহলে তার পরবর্তী জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে। মানুষের জন্য সবচেয়ে আশার বিষয় হচ্ছে, তার হাতের কাছেই এখন হেদায়েত রয়েছে। পৃথিবীর কোনো জনপদ বাকি নেই যেখানে সর্বশেষ আসমানি কিতাব কুরআন পৌঁছেনি। বাকি থাকে কুরআনের সঠিক বুঝ গ্রহণ করা। এ জন্য আল্লøাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দরকার। সেই অনুগ্রহ করুণা আকারে কদরের রাতে নেমে আসে। রমজান মাসের শেষের দিকে বেজোড় রাতে মানুষ অনেক আগ্রহ নিয়ে এ করুণা পাওয়ার আশায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকে। যদিও পুরো রমজান মাস মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের বাকি রাতগুলোতে আল্লাহর এ করুণা পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো মানুষের কর্তব্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল