১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আমদানি কম, সংগ্রহ নিয়ে সংশয়

চালের দাম আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা

-

বাঙালির প্রধান খাদ্য চালের দাম আরো বাড়তে পারে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে মানুষের জীবন-জীবিকা এখন বিপর্যস্ত। চলছে পবিত্র মাহে রমজান। সামনে ঈদ। সব দিক থেকেই মানুষের ব্যয়ের খাত কেবলই বাড়ছে। এর মধ্যে বছরজুড়েই চালের বাড়তি দাম সাধারণ মানুষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে আছে। গত এক বছরে দেশের খুচরা বাজারে চালের দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। আর ঠিক এই সময়ে বাজারে চালের দামে আবারো তেজিভাব দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বোরো ধানের মওসুম শুরু হয়েছে। বাজারে নতুন ধান এসেছে। কিন্তু তাতে দামের কোনো হেরফের হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে তেমন একটা সাফল্যের প্রমাণ দিতে পারেনি। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের প্রয়োজনীয় মজুদ না থাকা, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযান সফল করতে না পারা এবং বিদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে চাল আমদানিতে ব্যর্থতা এই অবস্থার জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংগ্রহ ও আমদানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়াই বাজারে চালের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণ। গত আমন মওসুমে সরকারের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। চলতি বোরো মওসুমেও যদি ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা না যায় তাহলে চালের দরে আরো ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, সরকারের গুদামে খাদ্য মজুদের পরিমাণ ন্যূনতম পরিমাণের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। থাকার কথা ১০ লাখ টন। আছে মাত্র তিন লাখ টন। সরকার চেষ্টা করেছে আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। সরকার চাল আমদানির শুল্ক বিপুলভাবে কমিয়ে দিয়েছে এবং বেসরকারি খাতে প্রায় ১৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই খাতে আমদানি হয়েছে সাড়ে সাত লাখ টন। বড় ধরনের শুল্ক মওকুফ পেয়েও রহস্যজনক কারণে আমদানিকারকরা চাল আনছেন না। তারা বিশ্বজুড়ে মহামারী, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, নতুন ধানের মওসুম শুরু হওয়া, আমদানি ও বাজারজাতকরণে স্বল্প সময় বেঁধে দেয়া এবং পরিবহন খাতে নানা সমস্যার কথা বলছেন। এই পরিস্থিতিতে এখন নতুন করে কৃষক ও মিলমালিকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহের চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু সে চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে সংশয় আছে। কারণ গত বোরো মওসুমে সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট লাখ টন। এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছিল মাত্র দুই লাখ টন। ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে সংগ্রহ হয়েছিল সাত লাখ টনের কম। আতপ চাল সংগ্রহেও দেখা গেছে একই অবস্থা। হয়তো ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত না বাড়াতেই এবার চলতি বোরো মওসুমে লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে তিন লাখ টন কমিয়ে নির্ধারণ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্যমন্ত্রী সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি করা হবে বলে আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে। বাজারে সরবরাহ ও সরকারি মজুদ কমে গেলে তার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সংশ্লিষ্টরা তেমনটাই আশঙ্কা করছেন। এই মুহূর্তে সমাজের ধনাঢ্য শ্রেণীর বাইরে সব শ্রেণীর মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। বাজারে শাক-সবজিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর। অনেকে ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এখন যদি চালের দামও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে মানুষের জীবনযাত্রা আরো দুর্বিষহ হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement