২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অর্থনীতির মন্থর গতি

সুশাসনই দাওয়াই

-

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। সরকারের রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে। মন্থর হয়ে পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি। চলতি অর্থবছরে নতুন পূর্তকাজ বা স্থাপনা নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারছে না সরকার। বরং গত অর্থবছর থেকেই বিকল্প খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা নিয়ে চলমান ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করে সরকার। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে প্রায় সমপরিমাণ অর্থ নেয়া হতে পারে। রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিলে হাত দেয়া নিঃসন্দেহে সরকারের পিছিয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত। এর আগের আর কোনো সরকারকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তহবিলে হাত দিতে হয়নি। এখানেই শেষ নয়, সরকার দ্বিতীয় আরেকটি বিকল্প উপায় খুঁজে নিয়েছে। সেটি হলো নবগঠিত অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল। এর মাধ্যমে বৈদেশিক রিজার্ভের অর্থ উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে। এরই মধ্যে একটি বন্দর এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পে রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে সরকারে এখন রীতিমতো টানাপড়েন চলছে। গত অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের চিত্র ছিল করুণ। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি, এমনকি আগের বছরের অর্জনও ধরে রাখা যায়নি। চলতি বছরে গত মার্চ পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে আদায় হয়েছে মাত্র পৌনে দুই লাখ কোটি টাকার মতো। অথচ লক্ষ্যমাত্রা হলো তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট তিন মাসে বাকি রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম। এ অবস্থায় দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। কয়েকটি অগ্রাধিকার প্রকল্প ছাড়া বাকিগুলো চলছে ঢিমেতালে।
সরকারের এ আর্থিক টানাপড়েনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বেসরকারি খাতেও। সরকারি বিভিন্ন দফতরের সাথে কাজ করে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তারা বকেয়া বিল পায়নি। ফলে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়-বাণিজ্য, কলকারখানায় আসন্ন ঈদে বেতন-বোনাস দেয়া নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন মালিকরা। তাদের বিপুলসংখ্যক কর্মচারীর ঈদ উদযাপন অনিশ্চিত।
এই পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে। আর করোনা মহামারীর বয়স মাত্র দেড় বছর। সুতরাং করোনার প্রভাবের চেয়েও গত এক যুগে সুশাসনের অভাব অর্থনীতির সঙ্কটের মূল কারণ বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ সুশাসন থাকলে, দুর্নীতি, লুটপাট না হলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা থাকত এবং করোনার ধাক্কা সামলে নেয়া খানিকটা সহজতর হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের পুরো সময় ধরেই অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিতরা বলে এসেছেন, প্রকৃত উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সুশাসন ও গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। কিন্তু সরকার সেদিকে কর্ণপাত করার প্রয়োজন মনে করেনি। তারা ইচ্ছামতো তাদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করে গেছেন। এখনো করছেন। সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতার বালাই নেই। সর্বত্র দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। চোখে দেখা যায় এমন উন্নয়ন অর্থাৎ উড়ালসড়ক, সুড়ঙ্গপথ, মেট্রোরেল ইত্যাদিকেই প্রকৃত উন্নয়ন মনে করে সেখানে তারা অগাধ অর্থ ঢেলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই সমাজে এবং অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। ব্যাংক খাত প্রায় বিপর্যন্ত। শেয়ারবাজার ধুঁকছে। বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক।
স্থবির হয়ে পড়া এই অর্থনীতি আগামী দুই-তিন বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা এখন সংশয় প্রকাশ করছেন।
করোনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেট বাস্তবায়নের হার কমেছে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার কমছে প্রায় ২৫ শতাংশ। আর রাজস্ব আদায় তো কমছেই। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অর্থের বিকল্প উৎস খোঁজা নয়, বরং সার্বিক সুশাসন নিশ্চিত করাই জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দুর্যোগে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু কেন বাংলাদেশে? জবিতে ভর্তি পরীক্ষায় আসন বেড়েছে ৫০টি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের মাটির নিচে পাওয়া গ্রেনেড মাইন মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে জবি, বন্ধ থাকবে পরীক্ষা কুড়িগ্রামে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে দেওয়ানগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিহাব কিশোরগঞ্জে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ সাতক্ষীরা বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলআরোহী নিহত বার্সেলোনাতেই থাকছেন জাভি চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা

সকল