১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুন্দরবনে ফের আগুন

প্রাণবৈচিত্র্য হুমকিতে

-

কিছুতেই যেন বিপদ পিছু ছাড়ছে না সুন্দরবনের। মাত্র তিন মাসের কম সময়ের ব্যবধানে সুন্দরবনে আবারো আগুন লাগার ঘটনা ঘটল গত সোমবার। এতে করে ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য। মারা পড়ছে বন্যপ্রাণীও। শুধু আগুনেই পুড়ছে না সুন্দরবন, একটি অপরাধী চক্র প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণী ও মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর টহল আর জেলে-বনজীবীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বাঘ, হরিণ হত্যাসহ বনের সম্পদ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। বিদ্যমান এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন যে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে, তা সহজেই অনুমেয়।
সুন্দরবনের দাসের ভারানী এলাকার গহীন অরণ্যে ৩ মে দুপুরে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায় বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখন পুড়ে যায় পাঁচ শতক বনভূমি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে, সুন্দরবনে বিগত দুই দশকে ২৫ বার আগুন লেগে প্রায় ৮০ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। দেখা গেছে, শুষ্ক মওসুমে বনে অনেকবার আগুন লেগেছে।
অগ্নিকাণ্ডের পরপরই প্রতিবার কারণ অনুসন্ধান, ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে আগুন লাগা এড়াতে করা সুপারিশ বাস্তবায়িত হতে দেখা যায় না। বিভিন্ন সময় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ের সাথে মিশে যাওয়া নদী ও খাল খনন, অগ্নিকাণ্ড প্রবণ এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটার পরপর পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা, চাঁদপাই রেঞ্জের ভোলা নদীর কোল ঘেঁষে বনের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ব্যবস্থা করার বিষয়ে জোরালো সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই সব সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ আগুন থেকে সুন্দরবনকে সুরক্ষায় লোকালয় সংলগ্ন নদী-খাল খনন করা এবং কাঁটাতারের বেড়া দেয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া বনে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য রোধে বনরক্ষীসহ কর্মকর্তাদের তৎপরতাও বাড়ানো প্রয়োজন। বাস্তবে তা হচ্ছে কই?
তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে সুন্দরবনে দ্বিতীয়বার আগুন লাগার ঘটনা উদ্বেগজনক। দুইবারের আগুনই মানবসৃষ্ট বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি আগুন লেগেছিল জনপদ থেকে এক মাইল গভীরে। এবার ঘটনা ঘটেছে চার মাইল ভেতরে। এই দুর্গম এলাকায় প্রবেশ করে কেউ যদি নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে, তাহলে পুরো সুন্দরবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার সঙ্গত কোনো কারণ নেই। বন বিভাগের ভাষ্য মতে, একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে, যাতে বনের অভ্যন্তরের জলাশয়ে বর্ষায় সহজে মাছ ধরতে পারে। এ জন্য দেখা যায়, বর্ষার আগেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে বেশি।
সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। একই সাথে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এটি। এই অমূল্য সম্পদ যারা ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। সুন্দরবন রক্ষায় বন বিভাগের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও এগিয়ে আসতে হবে। ভারানী টহল ফাঁড়ির নিকটবর্তী মরা ভোলা বহুদিন হলো একটি মজা নদী। কেবল মরা ভোলা নদীই নয়, এই বনের অভ্যন্তরের আরো যেসব নদী শুকিয়ে গেছে, সেগুলো খননের ব্যবস্থা করতে হবে। সবার জানা, নদী ও জলাধার শুকিয়ে গেলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তবু এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন।
বাস্তবতা হলোÑজাতীয় স্বার্থে সুন্দরবন রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যদিও এ ব্যাপারে লোকবল স্বল্পতার কথা বলে বন বিভাগ। তবে বন বিভাগ যদি নিজস্ব জনবলের সাথে বন রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় অধিবাসীদের সম্পৃক্ত করতে পারে, তাহলে কম লোকবল ও স্বল্প খরচে সুন্দরবন সুরক্ষায় বেশি সুফল পাওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement