২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পদ্মায় নৌদুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানি

ছোট নৌযানসহ স্পিডবোট তুলে দিন

-

লকডাউনের সময় লঞ্চ ও ফেরিতে যাত্রী পরিবহনে বাধা থাকায় স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে দু-তিন গুণ ভাড়ায় গাদাগাদি করে নদীতে চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়িয়াতে সোমবার ভোরে পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ডুবে যাওয়া স্পিডবোটে ৩২ জন যাত্রী ছিল। এটি নোঙর করা একটি বালুবোঝাই বাল্কহেডে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। বাংলাদেশের নৌদুর্ঘটনার বেশির ভাগ মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন ও বেপরোয়া চালানোর কারণে ঘটে থাকে। সোমবারের দুর্ঘটনাও এর ব্যতিক্রম নয়। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এটি ডুবে যায়নি। অর্থাৎ, যাত্রীবাহী স্পিডবোটটি ডুবে যাওয়া এবং এত মানুষের প্রাণহানির দায় বর্তায় এর চালক এবং নৌপথ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের ওপর। কারণ, নৌচলাচল নিয়ন্ত্রণের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা যে নেই, সোমবারের দুর্ঘটনা থেকে তা স্পষ্ট। এজন্য এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী স্পিডবোট চালকসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নৌ-ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে।
স্পিডবোটে সময় কম লাগায় বিপজ্জনক জেনেও বহু যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ি দেন। নৌপুলিশের সামনে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট চলাচল করলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব। ফলে এ দুর্ঘটনাটি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশে এখন করোনার কারণে লকডাউন চলছে। সড়কপথে গণপরিবহনের পাশাপাশি নৌপথেও সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোট চালকরা কিভাবে নদীপথে যাত্রী পারাপার করছেন? লক্ষণীয় বিষয় হলোÑ নৌদুর্ঘটনার পেছনে যেসব কারণ বিদ্যমান, সেসব জানার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। বরং দেখা যাচ্ছে, অনুমোদন ছাড়া অনেক নৌযান বাধাহীনভাবে নৌপথে চলাচল করছে। শুধু তাই নয়, বেশির ভাগ স্পিডবোট বা লঞ্চচালকের লাইসেন্স নেই। সঙ্গত কারণে এসব নৌযানের নদীপথে চলাচল করার কথা নয়; কিন্তু সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। তাই এটিও সম্ভব হচ্ছে! পরিণতিতে দেশে একের পর এক নৌদুর্ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষের তাতে কোনো চৈতন্যোদয় যে হচ্ছে না, তা নৌদুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেয়াই বলে দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে প্রতি বছর নৌদুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা যায়। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে ঝড়বৃষ্টির মৌসুমে। তাই জলপথে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে নৌচলাচল ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন।
সবার জানা, নৌদুর্ঘটনায় প্রাণহানির কারণগুলোর অন্যতম হলো ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন। এমনিতে ছোট আকারের নৌযানের দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে, অতিরিক্ত যাত্রী থাকলে সেই আশঙ্কা আরো বেড়ে যায়। সে জন্য ছোট নৌযানের সংখ্যা ও চলাচলের রুট সীমিত করে বড় আকারের নৌযানের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। ছোট আকারের সব নৌযান নদী থেকে সরিয়ে নিয়ে বড় আকারের লঞ্চ নামানোর উদ্যোগ নেয়াই সঠিক। বড় আকারের লঞ্চগুলোতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের প্রয়োজন থাকে না। তা ছাড়া ঝড়বৃষ্টিতে স্পিডবোটসহ ছোট লঞ্চ যত সহজে ডুবে যেতে পারে, বড়গুলো তত সহজে ডোবে না। তবে যাত্রী পরিবহনের সব নিয়মকানুন যথাযথভাবে মেনে চলা এবং নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে নৌদুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
সবার মতো আমরাও বলতে চাই, নৌপথের সুরক্ষায় অবহেলা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। নৌপথে স্থাপন করতে হবে পর্যাপ্ত সাইন-সিম্বল। বিরূপ আবহাওয়ায় সতর্কবার্তা দেয়ার ব্যবস্থারও উন্নতি হওয়া প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement