২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আফগানিস্তানে যুদ্ধের সমাপ্তি

সব পক্ষকে নিয়ে শান্তির চেষ্টা হোক

-

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশেষে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে সেখানে মার্কিনিদের চাপিয়ে দেয়া দুই দশক ধরে চলা যুদ্ধের অবসান হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই দীর্ঘ লড়াইয়ে পরাশক্তি আমেরিকা কী অর্জন করেছে। অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম বা অপার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা দেশটিতে সৈন্য পাঠায়। তাদের লক্ষ্য ছিল, ‘জঙ্গি তালেবান’ শাসনের অবসান ঘটানোর মাধ্যমে তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য হাসিল করা। প্রশ্ন হলো, চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর যখন আমেরিকা তার অবশিষ্ট সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে তখন কি অপার স্বাধীনতা অর্জিত হচ্ছে? সেখান থেকে তালেবান কি উৎখাত হয়ে যাচ্ছে? না, একটি প্রশ্নের উত্তরও ইতিবাচক নয়। আমেরিকার ঘোষিত লক্ষ্যের বিন্দুমাত্রও অর্জিত হয়নি। দেশটিতে বিদ্যমান সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ থেকে এটি স্পষ্ট।
দুই দশকের যুদ্ধে আমেরিকা দুই হাজার ৩১২ জন সৈন্য হারিয়েছে। চিরতরে পঙ্গু খোঁড়া হয়ে যাওয়া কিংবা মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়া সৈন্যের সংখ্যা কত তা জানা যায় না। অন্য দিকে এ যুদ্ধে এক লাখ ৫৭ হাজার আফগান নাগরিক নিহত হয়েছে। লাখো মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এর বড় একটা অংশ বেসামরিক নিরপরাধ মানুষ, যাদের সাথে এ যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমেরিকা এ যুদ্ধে ব্যয় করেছে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বা দুই লাখ কোটি ডলার। এ পরিমাণ অর্থ বিগত বিশ বছরে আমেরিকা যদি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করত তাহলে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ায় আর কোনো দরিদ্র মানুষ থাকত না। ১১ সেপ্টেম্বর সৈন্য সরিয়ে আনার দিন ধার্য করাটা তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনেই নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছিল। ২০ বছর পর যদি ফিরে তাকানো হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, ওই হামলার সাথে আফগান জনগণের দায় কতটুকু? আমেরিকা নিজেদের দানবীয় শক্তির কারণে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে কি? দেশটি থেকে সৈন্য সরিয়ে নিলেও পুরো দেশটিকে ধ্বংস এবং লাখ লাখ মানুষের জীবনহানির এই যুদ্ধের দায় আমেরিকার পিছু ছাড়বে না।
আমেরিকার এক জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সালের শুরুতে তালেবান গোষ্ঠী দেশটির ১৯ শতাংশ জেলা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে। আমেরিকা সমর্থিত আফগান সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে ৩৩ শতাংশ জেলা। দেশের বাকি অংশ উভয়ে ভাগাভাগি করে নিয়ন্ত্রণ করছে। আফগানিস্তান থেকে সম্প্রতি বিবিসিসহ অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, তালেবানদের শক্তি অটুট রয়ে গেছে। পুরো দেশের ওপর তাদের প্রশাসনিক সামাজিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দৃশ্যমান। আমেরিকা সৈন্য সরিয়ে নিলে সরকারের শক্তি কমে যাবে। তাদের মনোবলও ভেঙে পড়বে। তালেবান এরই মধ্যে আমেরিকার বিরুদ্ধে তাদের বিজয় ঘোষণা করেছে। এই অবস্থায় পুরো দেশের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তাহলে আমেরিকার অনন্ত যুদ্ধের ফল দাঁড়াল শুধুই বিপুল প্রাণহানি ও অপরিমেয় অর্থের অপচয়। জানা মতে, এই তালেবানের সৃষ্টি করেছিল আমেরিকাই। সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাস্ত করার জন্য তারা এই গ্রুপকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ সবকিছু দিয়ে সাহায্য করেছে। বলা যায়, নিজের সৃষ্ট বাহিনীর হাতেই ধরাশায়ী হলো আমেরিকা। তবে আমেরিকা এখন অন্যান্য বিশ্বশক্তির কাছে আফগান প্রশ্নে সাহায্য চাইছে। আমরা মনে করি, বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ হয়ে গেলেও এই সাহায্য প্রার্থনার মধ্যে ইতিবাচকতা রয়েছে। আঞ্চলিক শক্তিগুলো মিলে আফগানিস্তানে শান্তির জন্য কাজ করবেন। কাউকে পরাস্ত করে নয়, দেশটির জনগণকে আস্থায় নিয়ে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হোক। তাহলে অপার স্বাধীনতার সূত্রপাত হতে পারে। উপকৃত হতে পারে বিশ্ব।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত

সকল