২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘কঠোর’ লকডাউন শুরুতেই শিথিল

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ আমলে নিন

-

কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এখন সংক্রমণ রোধে নতুন করে এক সপ্তাহের ‘কঠোর’ লকডাউন দেয়া হচ্ছে দেশে। এ সময় শুধু জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। এতে অফিস-আদালত, শপিংমলসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গণপরিবহন ও ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এর আগে ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে গত রোববার। এখন আসছে ‘কঠোর’ লকডাউন। এক সপ্তাহের জন্য বলা হলেও পরে এর মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে বলে সরকারি সূত্র আভাস দিচ্ছে।
লকডাউন মানেই হলো তালাবদ্ধ করে দেয়া। অর্থাৎ সব কিছু বন্ধ। এর সঙ্গে আবার যুক্ত করা হয়েছে ‘কঠোর’ শব্দটি। বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতেই সম্ভবত এটি করা হয়েছে। শুনে মনে হচ্ছে, একটি বায়ুনিরোধী অবস্থা তৈরি করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। ‘কঠোর’ লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারির আগেই তৈরী পোশাক খাতের নেতাদের অনুরোধে রফতানিমুখী শিল্পকারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারখানা খোলা থাকলে লেনদেনও হবে। তাই সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে বলেও জানানো হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক খোলা থাকবে। এর ফলে ‘কঠোর’ লকডাউন আর কঠোর থাকছে না। শিথিল হয়ে পড়বে। মানুষ বাঁচাতে হলে সত্যিকারের কঠোর লকডাউনই প্রয়োজন। নামমাত্র লকডাউনে মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে না। বিশেষজ্ঞরাও এরকম নামমাত্র কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেননি।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, পোশাক খাত খোলা রাখা গেলে অন্যান্য শিল্প কেন খোলা রাখা যাবে না? স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানা চলতে পারলে অন্য কারখানারও সেটা না পারার কোনো কারণ নেই। গত বছর ২৬ মার্চ থেকে প্রথমে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। সে সময় প্রথমে জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকলেও একপর্যায়ে রফতানিমুখী শিল্পকারখানাসহ কিছু বিষয়ে ছাড় দেয়া হয়। এবার পরিস্থিতি গত বছরের চেয়েও ভয়াবহ। কিন্তু শুরুতেই পোশাক খাতে ছাড় দেয়া হলো। এতে পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যাবে কি না তা বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু আমাদের কাছে বিষয়টি সরকারের দ্বিধা বলেই মনে হচ্ছে। শিথিল লকডাউনের সময়ও সরকারের দ্বিধা সবার নজরে পড়েছে। একদিকে সব যানবাহন বন্ধ করা হয়, অথচ বইমেলা খোলা রাখা হয়। সেখানে অবাধে লোক সমাগম হয়েছে। নেয়া হয় মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা। লাখো মানুষ গাদাগাদি করে পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশে অপেক্ষা করেছেন। সন্দেহাতীতভাবে এগুলোও করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণ।
আবারো সেই একই ভুল করতে যাচ্ছে সরকার। করোনার চিকিৎসা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। কোনো পরীক্ষা না করে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। গাড়ির ব্যবসায়ী, দলীয় ঠিকাদারদের মাস্ক সরবরাহের দায়িত্বদান, নকল মাস্ক সরবরাহের প্রতিবাদকারী চিকিৎসকের চাকরি হারানো এমন অনেক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। তখনো আমরা বলেছিলাম, বিপন্ন মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে যেন কোনো ধরনের বাণিজ্য, দুর্নীতি, হেলাফেলা কেউ করতে না পারে; সরকারকে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু সে আহ্বান বিফলে গেছে। সরকারি দফতরের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ হয়েছে তারা মানুষের জীবন নিয়ে নিজেদের পকেট ভারীর সুযোগ নিয়েছে। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও সেই একই পাঁয়তারা কষছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সরকারকে এখনই সতর্ক হতে হবে। তা না হলে জাতীয় জীবনে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement