২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডি৮ সম্মেলন

সম্ভাবনার ক্ষেত্র উন্নয়নের আভাস

-

মুসলিম দেশগুলোর সংস্থা ডি৮-এর দশম শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকায় দশম শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, যা শেষে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হলো। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি সদস্য দেশগুলোর কিছু সাধারণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান একটি মেগা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। বাকি ছয়টি সদস্য দেশের সরকারপ্রধানরা বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দিয়ে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করেন। ডি৮ নামে পরিচিত জোটটি মূলত অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক একটি সংস্থা। এই আট দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি। দেশগুলোর মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। দেশগুলো চাইলে নিজেদের মধ্যে লেনদেনের মাধ্যমে সবাই উপকৃত হতে পারে।
সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, বিনিয়োগ ও যুবসমাজের সক্ষমতা বাড়াতে অন্য দেশের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ঝুঁকি বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। উপকূলীয় অঞ্চলে উপর্যুপরি ঘূর্ণিঝড় ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার সাথে গত বছর কোভিড-১৯ এর কারণে জিডিপির ১ শতাংশ ক্ষতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অব্যাহত থাকলে সামনে ক্ষতি আরো বাড়বে। বাংলাদেশীদের দুরবস্থা লাঘবে ডি৮ দেশগুলোর কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে সুযোগ অন্বেষণে ব্যবসায়ীদের গমনাগমন সহজ করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংযোগ গড়ে তুলতে পারেন।
ডি৮-এর অন্য সদস্য দেশ যথাক্রমে মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান। এরা বেশির ভাগই আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ। দেশগুলো বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে বেশ প্রভাব রাখে। ভূরাজনীতিতে দেশগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। ডি৮-এর সদস্য হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো জটিল সমস্যার সমাধানে এসব দেশ আমাদের সহযোগী হতে পারে। তবে গত তিন বছরে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের খুব সক্রিয় অবস্থায় দেখা যায়নি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এখন আমাদের প্রত্যাশা, ডি৮-এর সদস্য হিসেবে দেশগুলোকে কাজে লাগাতে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে সরকার। পাশাপাশি জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে; সেগুলো নিয়ে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের অনেক সুযোগ রয়েছে। আমাদের সরকার চাইলে এসব বিষয়ে অগ্রসর হতে পারে।
সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আর্থিক তারল্যের প্রয়োজন মেটাতে মেগা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ধারণা উপস্থাপন করেন। এর মাধ্যমে ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান অবকাঠামো নির্মাণে আর্থিক সহায়তা করবে। তিনি সংস্থাটিকে বর্তমানের প্রয়োজন পূরণে আরো হালনাগাদ করার তাগিদ দেন। কার্যক্রমের গতি আরো বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে এখনো বিপুল অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন। এজন্য আমরা এখনো প্রধানত চীনের ওপর নির্ভরশীল। ডি৮-এর মাধ্যমে আমাদের বিকল্প উৎস থেকে অর্থায়নের সুযোগ হলে আমাদের উন্নয়ন আরো বেগবান হবে ।
ডি৮ দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন বাড়ছে। ২০০৬ সালে দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০১০ সালে যা বেড়ে হয় ছয় হাজার ৮০০ কোটি ডলার। তবে দেশগুলোর মধ্যে লেনদেনের পরিমাণ এখনো সীমিত রয়েছে। জোটভুক্ত দেশগুলোতে বিশ্বের ১৩ শতাংশ মানুষের বাস হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববাণিজ্যের মাত্র তিন শতাংশের কিছু বেশি হয়। সেই তুলনায় জোটটি এখনো নিজেদের মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা উন্নয়নে বড় অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারেনি। ভবিষ্যতে এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আশা করব জোটটি আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বাণিজ্য বিনিয়োগ ও মানবকল্যাণে এর ভূমিকা আরো প্রসারিত করবে।


আরো সংবাদ



premium cement