১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
লকডাউন অকার্যকর হয়ে পড়েছে

ভিন্ন উপায় খুঁজতে হবে

-

কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় জারি করা সাত দিনের লকডাউন তৃতীয় দিনে এসে পুরোপুরি অকার্যকর পরিলক্ষিত হচ্ছে। গতকাল গণপরিবহন চালু হয়েছে। চালু হয়েছে রাইড শেয়ারিং। নির্ধারিত সময়ের পরও বাজার-ঘাট খোলা থাকছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে গত ৫ এপ্রিল সোমবার ভোর থেকে শুরু হয় লকডাউন। প্রথম দিন থেকেই এবারের লকডাউন ছিল শিথিল। গত রোববার সরকারি প্রজ্ঞাপনে যে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করা হয় তাতে স্পষ্টতই অসামঞ্জস্য দেখা গেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গণপরিবহন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। ভাবা হয়নি, লাখ লাখ মানুষ কিভাবে অফিসে আসবে। আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে একুশে বইমেলা, সিনেমা হল খোলা রাখা হয়েছে। যখন পরিবহন বন্ধ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে তখন বইমেলা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জনমনে হাস্যরসের খোরাক জুুগিয়েছে। গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাবে অফিস-আদালতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। মানুষ নিজের গরজে ঘরে অবস্থান করেছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়েও গুরুতর বলে মনে হচ্ছে। অন্তত সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান সরকারিভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে তাতে স্পষ্ট, পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। গতকাল একদিনে মারা গেছেন ৬৬ জন যা এ যাবৎকালের রেকর্ড। শনাক্তের ক্ষেত্রেও রেকর্ড ভাঙছে প্রতিদিন। কিন্তু এবারের লকডাউনে সেই ভয়াবহতার প্রতিফলন ঘটেনি, বরং মানুষের চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রথম দু’দিনে হাজার হাজার মানুষকে হেঁটে অথবা বিপুল অর্থ ব্যয়ে রিকশায় যাতায়াত করতে হয়। কোনো বাহন না পেয়ে পথচারীরা সড়কে বিক্ষোভ করেন। গণপরিবহন চালু করার দাবি জানান। বইমেলা, সিনেমা হল খোলা রাখার উদাহরণ দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদাররা পথে নেমেছেন। তাদের বক্তব্য যৌক্তিক সন্দেহ নেই। কিন্তু দিন এনে দিন খাওয়া হতদরিদ্র মানুষের সেই সঙ্ঘশক্তি নেই। মুটে, মজুর, নির্মাণ শ্রমিক, হোটেলের বয়-বেয়ারা ইত্যাদি অনিশ্চিত পেশায় নিয়োজিতরা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বা রাস্তায় ভাঙচুর করতে পারেননি। তারা কাজ না পেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এসব মানুষের জন্য একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করারও কোনো উদ্যোগ-আয়োজন সরকারি বা বেসরকারি কোনো মহল থেকেই দেখা যায়নি।
গতকাল গণপরিবহন চালুর পর রাজধানীতে অফিসযাত্রী ও নানা কাজে বাইরে বেরুনো মানুষের মধ্যে অনেকটাই স্বস্তির ভাব দেখা গেছে। গত এক বছরে কোভিড-১৯ মহামারীতে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক জীবন এখন সম্পূর্ণ এলোমেলো। এর ওপর নতুন করে লকডাউনের চাপ নেয়া মানুষের জন্য কেবল দুঃসহ নয়, অসম্ভব। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার ন্যূনতম প্রস্তুতিও সরকারের ছিল না। প্রয়োজনীয় প্রাথমিক উপকরণও নেই সরকারের হাতে। টিকা সংগ্রহের জন্য অগ্রিম বিপুল বাড়তি টাকা খরচ করে চুক্তি করা হলেও এখন সেই টিকার সরবরাহও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এই সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ যা-ই থাকুক, এর মোকাবেলায় লকডাউন ছাড়া ভিন্ন উপায় খুঁজতে হবে। আর সেটি করতে হবে পরম দক্ষতার সাথে। গোঁজামিলের ব্যবস্থা নিলে তা আমাদেরকে আরো কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement