২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ধান-চাল সংগ্রহে হতাশা

সঙ্কটে খাদ্যনিরাপত্তা

-

গণখাতে বণ্টন বা বিক্রিতে সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণে খাদ্য মজুদ করে। চালের মজুদ গড়ে তোলা হয় প্রধানত ফসলের মৌসুমে অভ্যন্তরীণভাবে কিনে। অন্যদিকে গম মজুদ করা হয় মূলত আমদানি করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় চাল বিদেশ থেকে আমদানিও করতে হয়। তবে বড় ধরনের ফসলহানি না হলে চাল আমদানির প্রয়োজন পড়ে না আমাদের। উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তা খুবই কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনেক সময় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ কার্যক্রমের দুর্বল ব্যবস্থাপনায় সরকারি খাদ্যভাণ্ডারে খাদ্যশস্য কমে যায়। দেশে এক বছর ধরে সেই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ না হওয়ায় বিদেশ থেকে এ বছর চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে সাড়ে ১৯ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল; কিন্তু বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ ভাগ অর্জন সম্ভব হয়। ৩১ মার্চ দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে, মজুদের পরিমাণ ছিল চাল ৪ দশমিক ১৪ লাখ টন ও গম শূন্য দশমিক ৭২ লাখ টন। এ হিসাবে এখন খাদ্যশস্যের সর্বমোট মজুদ ৪ দশমিক ৮৬ লাখ টন, যা নিরাপদ খাদ্য মজুদের অর্ধেকেরও কম। যেখানে থাকার কথা চাল-গম মিলিয়ে ১১ লাখ টন। গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, গত বছর এ সময়ে সরকারের মজুদ ভাণ্ডার ছিল ১৪ লাখ টনের মতো। সুতরাং মজুদ পরিস্থিতি যে সন্তোষজনক নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সরকার ভারত থেকে এক লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুততম সময়ে আমদানি এবং প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বাড়াতে বিভিন্ন উৎস থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে।
বোরো দেশের সবচেয়ে বড় খাদ্যশস্য। তিন কোটি ৬০ লাখ টন চাল উৎপাদনের বিপরীতে বোরো থেকেই পাওয়া যায় প্রায় দুই কোটি টন। এ বছর সাতটি হাওর-অধ্যুষিত জেলায় চার লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এখান থেকে দেশের মোট উৎপাদনের শতকরা ২০ ভাগ অর্থাৎ ৪০ লাখ টন ধান আশা করা হয়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় অন্তত ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এবার বোরোর উৎপাদন আশানুরূপ নাও হতে পারে। এতে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জন হয়; সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়। সরকারের বাস্তবমুখী কার্যক্রম না থাকায় চলতি বছর ধান-চাল সংগ্রহের এমন অবস্থা বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সরকারি ভাণ্ডারে খাদ্যশস্যে টান পড়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে মজুদদার আর ফড়িয়া মহাজনরা। বাজারে চালের দাম বাড়ানোর চক্রটি বসে নেই। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার হলো পর্যাপ্ত সরকারি মজুদ এবং সে মজুদ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অব্যাহত বিতরণ। বাস্তবতা হলোÑ বাজারে চাল আছে। কিন্তু তা মজুদদারের কাছে। তারা অব্যাহতভাবে দাম বাড়িয়েই চলছে। এতে ত্রাহি অবস্থা নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর। সরকার ওএমএস, ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখার মতো কর্মসূচিতে পর্যাপ্ত চাল ছাড়তে পারলে বাজারনির্ভরতা কমতো। বাজারের নিয়মেই লাগাম টানা যেত মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতায়। কিন্তু সরকারি মজুদ সঙ্কটে এমনটি করার সুযোগ সরকারের হাতে এখন নেই। মজুদ যখন তলানিতে, তখন এগুলো সেভাবে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাস্তবে খাদ্য মজুদ একরকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে।
খাদ্যনিরাপত্তা যেকোনো দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু ভালো ফসলের পরও মজুদের জন্য খাদ্য আমদানি করা সরকারের দুর্বল ব্যবস্থাপনা দায়ী। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এখন সামনে বোরো মৌসুমের যে সুযোগ আসছে, এটি কাজে লাগাতে প্রয়োজন বাস্তবমুখী তৎপরতা। সবার প্রত্যাশা, দেশের কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের প্রকৃত মূল্য পাবেন। ঠিক তেমনি, সেই ফসলের একটি অংশ দিয়ে গড়ে তোলা উঠুক সরকারের খাদ্যভাণ্ডারের নিরাপদ মজুদ; যাতে দেশে খাদ্যশস্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement