২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি

প্রাণ-প্রকৃতির জন্য হুমকি

-

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ক্ষতির মুখে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এখানে লাখ লাখ মানুষ নানা সময়ে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, তাপদাহ ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের অনেক মিঠা পানির নদ-নদী লবণাক্ত হয়ে উঠছে। কয়েক দিন ধরে বরিশাল নগরীসংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর পানিতে লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। নদী তীরের মানুষ ক’দিন আগেও দৈনন্দিন কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতো। এখন আর করতে পারছে না।
২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কীর্তনখোলার পানিতে তড়িৎপরিবাহিতা (ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটি-ইসি) অনেক কম থাকলেও মার্চ থেকে বেড়েছে কয়েক গুণ। গত দুই মাস থেকে পানির তাপপাত্রাও বেড়েছে। এক সমীক্ষার তথ্য মতে, শুষ্ক মৌসুমে সাগরের পানি তেঁতুলিয়া নদী পর্যন্ত চলে আসছে। এই মৌসুমে উজানের পানি কম প্রবাহিত হওয়া এবং সময়মতো স্বাভাবিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়া, দূষণসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কীর্তনখোলার মতো নদীর মিঠা পানি এখন লবণাক্ত হয়ে উঠেছে। এটি জীববৈচিত্র্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শুধু কীর্তনখোলাই নয়, উপকূলীয় প্রায় সব নদ-নদীরই একই দশা।
মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। যার বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ ভয়াবহ ক্ষতির শিকার। সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাগরের লোনা পানি নদীতে উঠে এসে মাটিতে মিশছে। এমনকি ভূ-গর্ভস্থ পানির সঙ্গেও মিশে গিয়ে সুপেয় পানি দূষিত করে তুলছে। কুয়া বা নলকূপের মাধ্যমে সেই লবণাক্ত পানি পান করছেন আমাদের উপকূলবাসী। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। যার আলামত এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে। আইসিডিডিআরবির এক গবেষণা মতে, পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় বসবাসকারী নারীদের তুলনায় উপকূলীয় এলাকায় (সমুদ্রের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে) বসবাসকারী নারীদের গর্ভপাতের প্রবণতা বেশি। এখানে গর্ভপাত হচ্ছে ১১ শতাংশ। উপকূলের নারীরা যে পানি পান করেন তাতে বিদ্যমান লবণের পরিমাণের ওপর এ পার্থক্য নির্ভর করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে, কোনো ব্যক্তির প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া অনুচিত। তবে উপকূলীয় এলাকার মানুষ গড়ে প্রতিদিন ১৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা পাহাড়ি এলাকার মানুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি। বেশি লবণের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ছে। কারণ, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিনে দিনে বাড়ছে।
১০ বছর আগে নদীগুলোতে উজান থেকে যে পরিমাণ পানি আসত এখন তা কমেছে। নদীর পানির চাপ কমে যাওয়ায় সাগরের পানির চাপ অপেক্ষাকৃত প্রবলতর হয়েছে। এ জন্যই নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। এ থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়, উজানের পানির প্রবাহ বাড়ানো। এর জন্য প্রতিবেশী দেশের সাথে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু অভিযোজনে যা যা করা দরকার সেটি করতে হবে। সেই সাথে মানুষজনকে সচেতনও করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ভবিষ্যতে জলবায়ুর পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। তাই জলবায়ুর পরিবর্তনের স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। তাই এসব অঞ্চলের সমস্যার সমাধানে বেশি জোর দিতে হবে। উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণ জরুরি। এর পাশাপাশি নতুন করে বনায়ন করতে হবে। ম্যানগ্রোভ বন জীববৈচিত্র্য, মাছের আবাসস্থল ও ইকোট্যুরিজম সুবিধাসহ কিছু অতিরিক্ত সুবিধা দেয়। এটি পরিবেশ দূষণ রোধের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে।
উপকূলের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি লবণাক্ততাসহিষ্ণু ধান ও অন্যান্য ফসলের বীজ সরবরাহেরও ব্যবস্থা করা জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন

সকল