১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মাহবুব তালুকদারের সত্যকথন

সিইসির ক্ষোভ কতটা যৌক্তিক

-

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার অধীনে দেশে নির্বাচনব্যবস্থা যে ভেঙে পড়েছে এ বিষয়ে হাজারটা প্রমাণ হাজির করা সম্ভব। তবে দেশে বিতর্ক করার মানুষের অভাব নেই। হরহামেশাই দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বলার বহু নজির তৈরি হচ্ছে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অনেক ঘটনায়। সুতরাং অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, দেশে গণতন্ত্র দুর্বল হয়েছে, নির্বাচন নির্বাসনে যাওয়ার উপক্রম, এমন বাস্তবতাও কেউ কেউ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন।
একইভাবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অযাচিত আক্রমণেও বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। বর্তমান কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে মাহবুব তালুকদার ভিন্ন মত প্রকাশ করে এসেছেন। তিনি নির্বাচনের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন সন্দেহ নেই। কিন্তু তার সেসব বক্তব্য অসত্য ছিল এমনটা কেউ কখনোই বলতে পারেননি।
বর্তমান ইসির অধীনেই মধ্যরাতে ভোটের বাক্স ভরার নির্বাচন হয়েছে । এই সত্য খোদ সিইসিই পরে স্বীকার করেছেন। ইভিএম চালুর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ইভিএম চালু হলে আগের রাতে কেউ ভোটের বাক্স ভরার সুযোগ পাবে না। ইভিএম চালুর পর ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি বুথে ক্ষমতাসীন দলের একজন করে ক্যাডার মোতায়েন থাকে এবং তারা ভোটারদের নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করে। এমন রিপোর্ট প্রতিটি নির্বাচনের পর দেশের প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে এবং পাচ্ছে। এসব রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে ইসি বা অন্য কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। সুতরাং এটা নিশ্চিত, রিপোর্টগুলো অসত্য নয়। হুদা কমিশন একটি নির্বাচনের প্রচারেও সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি। ক্ষমতাসীনদের বিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লোকদেখানো কিছু ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অসম প্রচারের সুযোগ, কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভোট দিতে ভোটারকে বাধ্য করার মতো নানা অসঙ্গতির কারণে সব নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এই ইসির সময়ে যত নির্বাচনে যত বিরোধী প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তা সম্ভবত জাতীয় রেকর্ড। এটিই একমাত্র কমিশন যার প্রধানের বিরুদ্ধে এমনকি অর্থ নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক ইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এসব কথাই নানা সময় বিভিন্নভাবে নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। অন্য সব কমিশনার নির্বাচনী ভুলত্রুটি নিয়ে মুখে কলুপ এঁটে থাকলেও মাহবুব তালুকদার দায় এড়িয়ে যাননি। যা সত্য মনে করেছেন তা স্পষ্ট করে বলেছেন। তার এসব বক্তব্য নিয়ে সিইসি মাঝে মধ্যে ভিন্ন মত জানিয়েছেন, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখন মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি যেন আর ধৈর্য রাখতে পারছেন না। প্রকাশ্য সভায় হাজার হাজার মানুষের সামনে মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। বলেছেন, কমিশনকে হেয়, অপদস্থ ও নিচে নামানোর জন্য যা করা দরকার, মাহবুব তালুকদার সবই করে চলেছেন। বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসিকে হেয় করছেন। রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন।
সিইসির অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার সুযোগ আছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড যদি অসঙ্গত, তার মর্যাদার পক্ষে হেয়কর এবং নিজ দায়িত্ববহির্ভূত বলে প্রতীয়মান হওয়ার যৌক্তিক কারণ থাকে, তাহলে সেসব বলা যেকোনো নাগরিকের দায়িত্ব। ইসির কমিশনার হিসেবে মাহবুব তালুকদার এ ক্ষেত্রে অন্যায় কিছু করেছেন বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি।
মাহবুব তালুকদার বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হলে দেশে স্থিতিশীলতা, সামাজিক অস্থিরতা ও ব্যক্তির নৈরাশ্য বাড়ে। নৈরাশ্য থেকে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। নৈরাজ্যপ্রবণতা কোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারলে আমরা গণতন্ত্র অস্তাচলে পাঠানোর দায়ে অভিযুক্ত হবো।
এই বক্তব্যে রাজনীতি খোঁজার অর্থ হলো নিজের মাথা রাজনীতির কাছে বিকিয়ে দেয়া। সিইসি পদে কে এম নুরুল হুদার নিয়োগও রাজনৈতিক বিশেষ বিবেচনায়Ñ এমন কথা লোকে বলে। নিয়োগকর্তার চাহিদা তিনি শতভাগ পূরণ করেছেন সন্দেহ নেই। কিন্তু দেশ থেকে গণতন্ত্র অস্তাচলে পাঠানোর দায় তিনি কি এড়াতে পারবেন?


আরো সংবাদ



premium cement