২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ

সোনালি দিনের প্রত্যাশা

-

বাঙালি সব সময়ই আবেগী জাতি। এ জন্য বাংলাকে অনেকে ‘কবি ও কবিতার দেশ’ বলে থাকেন। আর বিষয়টি যদি দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সাথে জড়িত হয় তাহলে আমাদের আবেগ উথলে উঠবে সেটিই স্বাভাবিক। এমন প্রেক্ষাপটে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার ঘটনায় আবেগাপ্লুত হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিক আবেগেরই প্রকাশ ঘটেছে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। জাতিসঙ্ঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) গত শুক্রবার বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করেছে। উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে যেসব যোগ্যতা থাকতে হয় সেগুলো অর্জন করেছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই সিডিপি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সুপারিশ করেছে। আগামী পাঁচ বছর এসব যোগ্যতা ও সক্ষমতা ধরে রাখতে এবং অধিকতর উন্নয়ন ঘটাতে পারলে ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দেয়া হবে। তখনই হবে আমাদের প্রকৃত অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। জাতিকে স্বপ্ন দেখানো তার কাছ থেকে প্রত্যাশিতই বটে। একটি স্বপ্নের শিখর স্পর্শ করার লক্ষ্য নিয়েই জাতি সর্বান্তকরণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়বে, এটাই কাক্সিক্ষত। সে দিক থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ও তার নেতানেত্রীরা কখনো পিছিয়ে থেকেছেন, এমন বদনাম তাদের কোনো শত্রুও দিতে পারবে না।
২০২৬ সালে এই উত্তরণ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেলে এ দেশ যেমন বেশ কিছু দিক থেকে বিশেষ সুবিধা পাবে, তেমনি নতুন অনেক চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা যেমনটা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে আরো উজ্জ্বল হবে দেশের ভাবমর্যাদা। এই অর্জন বড় ভূমিকা রাখবে দেশের ব্র্যান্ডিংয়ে।
আর অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে আসছে, সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ঋণ পরিশোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। ফলে সহজ শর্তের ঋণসুবিধা বাতিল হলেও তেমন অসুবিধা হবে না। তবে প্রস্তুতি পর্বে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় আছে, তাই এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। শিল্পকারখানার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে।’
সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বর্তমান বাজেটে যেসব খাতে ভর্তুকি সুবিধা দেয়া হয়, তা আর থাকবে না। কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পণ্য রফতানির সুবিধা থাকবে না। বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্ব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। আমাদের মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। দেশীয় পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। প্রতিযোগিতার নতুন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ রাজস্ব বিভাগে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, তা না হলে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে না। সরকার যেসব বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করেছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। রফতানি বাড়াতে অগ্রাধিকার বাণিজ্যসহ মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সবাই প্রায় অভিন্ন কণ্ঠে কথা বলেছেন। ভবিষ্যতে যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে হবে সেগুলো চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এখন সরকার যথাযথ পরিকল্পনার ভিত্তিতে এগিয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন নিশ্চয়ই অধরা থাকবে না। আমরা সেই সোনালি দিনের প্রত্যাশায়।


আরো সংবাদ



premium cement