১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়হীনতা

ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

-

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস খুলে দিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে তা স্থগিতের প্রতিবাদে এই আন্দোলনের সূচনা। এক দিকে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে ঢাবির অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের পরীক্ষাসূচি সচলের ঘোষণা, অন্য দিকে একই দাবিতে মাঠে নামা অন্য ছাত্রদের লাঠিপেটা ও আটক করা হচ্ছে। প্রশাসনের দ্বৈত আচরণ ও সিদ্ধান্তহীনতায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। ছাত্ররা চান অবিলম্বে পরীক্ষাসূচি সচল করে পরীক্ষা নেয়া হোক। কিন্তু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয়হীনতা ও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত বদলে দুর্ভোগ বাড়ছে তাদের। শিক্ষাবিদরাও মনে করেন, পরীক্ষা স্থগিতের উদ্যোগের আগে সময় নেয়া দরকার ছিল। অন্তত পরীক্ষা সচল থাকা উচিত। অন্যথায় সেশনজট ও চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ার যে ধারাবাহিকতা তা আরো দীর্ঘ হবে। হতাশা ও বিষণ্নতা চেপে ধরবে শিক্ষার্থীদের। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি । কিন্তু সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বলেই মনে হয়।
পরীক্ষা নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধ্যবাধকতা। একবার পরীক্ষা শুরু করে বন্ধ করা হলে শিক্ষার্থীদের মন ভেঙে যায়। এ প্রেক্ষাপটে পরীক্ষার দাবিতে তারা যে আন্দোলনে নেমেছেন, যার যৌক্তিকতা রয়েছে। যখন পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়; তখন ছাত্রদের সাথে আলোচনা করে নেয়া হয়নি। তারা যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই পরীক্ষা দিতে এসেছেন। এখন পরীক্ষা কেন বন্ধ করা হলো? অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সাথে ১৭ জানুয়ারির সভায় নিজস্ব একাডেমিক কাউন্সিলে বৈঠক করে পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয় ইউজিসি। এরপরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, ২৪ মে থেকে চালু হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস-পরীক্ষা। এরপরই ঘোষিত পরীক্ষাসূচি স্থগিত করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বারবার পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। পরীক্ষাসূচি প্রকাশের পর অনেক শিক্ষার্থীই মেস ভাড়া নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যারা পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে প্রবেশের আবেদনের যোগ্যতা পূরণের আশা করেছিলেন তারা পরীক্ষা নেয়া স্থগিতের সিদ্ধান্তে আরো হতাশ হয়েছেন। যদিও চাকরির বিষয়টি আমলে নিয়ে অনার্স ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু সরকারের সমন্বয়হীনতায় বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এমন সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আন্দোলনেই কি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করতে হবে কি না- এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের। যদি আন্দোলনের মাধ্যমে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নেয়ার দাবি আদায়ে সক্ষম হন, তাহলে সবাই এ পথে হাঁটবেন। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, সরকার পতনের কোনো আন্দোলন করছেন না তারা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষা দিতে পারেন, অন্যদের ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন? তবে বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বারবারই অপচেষ্টা চালাচ্ছে। চিহ্নিত ওই মহল কখনো ভাস্কর্যের নামে আন্দোলন করছে, কখনো বিদেশী একটি সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা নানান তথ্য প্রচার করছে, সাজানো নাটক প্রচার করছে। সেগুলোর সবকিছুতে বিফল হয়ে এখন আমাদের ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তারা।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চান, তার কোনো আলামত এখনো দেখা যায়নি। বাস্তবতা হলো-দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তাদের মধ্যে এমনিতেই একধরনের হতাশা কাজ করছে। যেটা তাদের মানসিক অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গত কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া শুরু করায় শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্তে হতাশা থেকেই তারা রাজপথে নেমেছেন। তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আর কত অপেক্ষা করবেন তারা।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবাই মনে করেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো। ভ্যাকসিনও এসে গেছে। তা ছাড়া পরীক্ষা চলছিল। হঠাৎ কী এমন হলো, পরীক্ষা নেয়া বন্ধ করে দিতে হলো? আর সাত কলেজের পরীক্ষা হতে পারলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কলেজে কেন পরীক্ষা নেয়া যাবে না? সরকারের কাছে এর সদুত্তর নেই। তাই ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব শিক্ষার্থীর জন্য করোনার টিকা বাধ্যতামূলক করে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এটা কঠিন কাজ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে সব কাজ চললেও করোনার কারণে শুধু শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রাখা দুর্বল যুক্তি বলেই মনে হয়।


আরো সংবাদ



premium cement